Hooghly News: এক অন্য শিক্ষকের গল্প

Hooghly News: এক অন্য শিক্ষকের গল্প

TV9 Bangla Digital

| Edited By: Tapasi Dutta

Updated on: Sep 05, 2023 | 7:50 PM

পোলিও তাকে পঙ্গু করার চেষ্টা করেও পারেনি,লাঠি তে ভর দিয়ে এক পায়ে হেঁটে ছাত্রী পড়ান, ছেলেকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন হুগলির বৈঁচি গ্রামের ফাতেমা জিন্না।

পোলিও তাকে পঙ্গু করার চেষ্টা করেও পারেনি,লাঠি তে ভর দিয়ে এক পায়ে হেঁটে ছাত্রী পড়ান, ছেলেকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন হুগলির বৈঁচি গ্রামের ফাতেমা জিন্না। বছর পঁয়ত্রিশের ফাতেমা জানান,তার এক বছর বয়সে একদিন ভীষন জ্বর হয়। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন চিকিৎসক। দেওয়া হয়নি বলায় ভ্যাকসিন দিয়ে দেন। বাড়ি এসে কয়েকদিন সব ঠিক তারপর হামা দিয়ে চলা। হাঁটার বয়সে হাঁটতে না পারা। ফাতেমার এক কাকাও পোলিও আক্রান্ত হয়েছিলেন। মেয়ের উপসর্গে তাই বাবা বুঝতে পারেন সেও পোলিও আক্রান্ত হয়েছে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখালেও কোনো কাজ হয়নি। মেয়েটা পঙ্গু হয়ে গেলো ধরেই নিয়েছিল পরিবার। সেই জায়গা থেকে শুরু হয় ফতেমার লড়াই। মেমারির গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি। সেখান থেকে হাইস্কুলে যেতে হত অনেকটা হেঁটে এসে বড় রাস্তায় বাস ধরে। একটু বড় হলে ক্রাচ নিয়ে হাঁটার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ক্রাচে হাঁটা রপ্ত করতে না পারায় লাঠিই ভরসা হয়। সেই লাঠিতে ভর দিয়ে হাট গোবিন্দপুর কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। ২০০৫ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা দিয়ে বৈঁচি বীণাপানি বালিকা বিদ্যলয়ে চাকরিতে যোগ দেন ২০০৬ সালে। ভূগোলের শিক্ষিকা। সেই থেকে স্কুলের ছাত্রী সহ শিক্ষিকাদের অতন্ত প্রিয় দিদিমনি। নিয়মিত স্কুলে আসা ক্লাস নেওয়া থেকে মিড ডে মিলের দায়িত্ব সামলানো ফাতেমা দিদিমনি নিপুন ভাবে সামলান। তারপর ২০০৮ সালে বৈঁচিগ্রামে বিয়ে হয় আসগর আলি মন্ডলের সঙ্গে। তাদের একমাত্র ছেলে আমান ক্লাস ফাইভের ছাত্র। বাড়ির কাজ করে নিজে স্কুলে বেরোনোর আগে ছেলেকে তৈরী করে দেন। ছেলে যাতে মানুষ হয় নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই চেষ্টাই করছেন বলে জানান ফাতেমা।
ফাতেমার স্বামী বলেন,অনেক প্রতিকুলতা পেড়িয়ে অনেক গঞ্জনা সয়ে ফাতেমা এই জায়গায় এসেছে। আমরা খুবই সুখি। বৈঁচি বীণাপাণি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, সাথী বসু বলেন,মানসিকভাবে খুবই দৃঢ় ফাতেমা দি। উনি বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন। সমস্ত রকম পরিস্থিতিতে উনি মানিয়ে নেন, শুধু ক্লাস করা নয় মিড ডে মিলের উনি নোডাল শিক্ষিকা। উনি কোন কম নৈপুণ্যে বা কম দক্ষতায় কিছু করছেন না এমনটা নয়। আমাদের মতই উনি সক্ষম এবং উনার জন্য আলাদা করে কোন ব্যবস্থা আমরা করি না। আমি চেষ্টা করি যাতে দোতলার ক্লাসে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে না হয়। নিচের ঘরে ক্লাস দিতে। ফাতেমা জিন্না বলেন, জীবনে চলার পথে অনেক সময় কটুক্তি ও শুনতে হয়েছে। প্রথম প্রথম সেগুলোতে কষ্ট পেতাম। পরে ভেবেছি যেটা সত্যি সেটাই তো মানুষ বলছে। আর পাত্তা দিইনি। ভালো করে হাঁটতে না পারার কারণে কোনদিনও প্রাইভেট টিউশনি নিতে পারিনি। আরেকটু ভালো গাইড পেলে হয়তো আমি অন্য কিছু হতে পারতাম। তবে এখন যেখানে আছি যে স্কুলের আমি শিক্ষিকা হয়েছি এখানে সবাই খুবই ভালো। সহশিক্ষিকারা ছাত্রীরা এত ভালবাসে সম্মান করে আর কি চাই।