India-Britain News: ভারতীয়দের ভিসায় উদার হবে ব্রিটেন?

নীল থেকে লাল ব্রিটেন, কোথায় লাভ ভারতের? এবার যুদ্ধে আফ-পাক? ডেনমার্কে নিষিদ্ধ অশ্বগন্ধা! ১১০ কোটির পকেট ফাঁক, উধাও ৩৫ হাজার কোটি। ১০ সেকেন্ডে ২০ লাখ!

India-Britain News: ভারতীয়দের ভিসায় উদার হবে ব্রিটেন?
| Edited By: | Updated on: Jul 06, 2024 | 11:18 PM

ব্রিটেনে বিরোধীরাই যে ৪০০ পার করে দিয়েছে। সে খবর তো আপনারা জেনেই গেছেন। ৬৫০ আসনের পার্লামেন্টে লেবার পার্টি একাই ৪১২. কনজারভেটিভরা মাত্র ১২১. পদত্যাগ করে স্ত্রী অক্ষতাকে নিয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন ঋষি সুনক। স্ত্রী ভিক্টোরিয়াকে নিয়ে তাঁর জায়গায় ডাউনিং স্ট্রিটের নতুন বাড়িতে ঢুকে পড়েছেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়র স্টার্মার। ভোটের রেজাল্টে আমি আর যাচ্ছি না। আমি যেটা বলব, গত দেড় দশক ধরে ওয়েস্টমিনস্টারে ক্ষমতায় ছিলেন কনজারভেটিভরা। ফলে দীর্ঘদিন পর বিলেতে পালাবদল হওয়ায় এবার দিল্লির সঙ্গে লন্ডনের সম্পর্ক কোন দিকে গড়াবে। এইটাই এখন টকিং পয়েন্ট। আমি মূলত তিনটে পয়েন্টের ওপর আলোচনাটাকে রাখতে চাইছি। প্রথম, দু-দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। কারণ এরসঙ্গে আর্থিক ব্যাপার জড়িয়ে আছে। দ্বিতীয়, ব্রিটেনে ভারতীয়দের চাকরি-বাকরি ও পড়াশোনা। কেন গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তৃতীয়, কাশ্মীর ইস্যুতে নতুন ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান। তিন নম্বরটা নিয়ে ওরা কী বলল না বলল, তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। তবে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আলোচনাতে রাখতেই হবে। এক এক করে আসি। দেখুন, একটা সময় পর্যন্ত ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের বড় অংশই লেবার পার্টির সমর্থক ছিলেন। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাঁদের কনজারভেটিভ পার্টির দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করেন। তাতে কাজও হয়। এরপর ঋষি সুনক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে একটা আশা তৈরি হয়। ২০২২ সালেই দীপাবলির সময় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করা হয়েছিল। যদিও বাস্তবে সেটা হয়নি। ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট হলে আমাদের ব্রিটিশ পণ্যকে বিনা বাধায় দেশে ঢুকতে দিতে হবে। তাতে দেশীয় উত্‍পাদকদের কী হবে সেটা ভাবার আছে। একইভাবে আমাদের দেশে উত্‍পাদিত পণ্যের কাঁচামালে ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আবার সস্তা ভারতীয় পণ্যে ছেয়ে যাবে বিলেতের বাজার। তাতে ব্রিটেনের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ঘা লাগবে। সেটা ব্রিটেন মানবে না। এ জটিলতায় সুনকের আমলে এগ্রিমেন্ট হয়নি। পরের দিকে সুনককে দেখে আমাদেরও কখনও মনে হয়নি যে তিনি এবিষয়ে আন্তরিক। তবে, ভোটের প্রচারে লেবার নেতা ডেভিড ল্যামি এবার কনজারভেটিভদের সমালোচনা করে বলেছিলেন যে কত দীপাবলি এল গেল। ভারতের সঙ্গে আমরা বাণিজ্য চুক্তি করতে পারলাম না। ল্যামিই ব্রিটেনের নতুন বিদেশমন্ত্রী হয়েছেন। ফলে আবার একটা আশা তৈরি হয়েছে যে ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বল ফের গড়াতে শুরু করবে। দ্বিতীয় বিষয়টা হল চাকরির ক্ষেত্রে এবার ভারতীয়দের জন্য কতটা দরজা খুলবে ব্রিটেন। স্টুডেন্ট ভিসার ব্যাপারটা ধরে নিতে পারি যে একই থাকবে। কারণ ভারতীয় পড়ুয়ারা বিলেতে পড়তে গেলে তাতে ওদের লাভ। ঘটনা হল লেবাররা কনজারভেটিভদের মতো অতোটা ইমিগ্রেশন বিরোধী নন। তবে তাঁরা একইসঙ্গে ব্রিটিশদের কাজের দাবি আগে করেন। তাই ওয়ার্কিং ভিসার ব্যাপারটা নতুন জমানায় কী হবে তা এখনই বলা কঠিন। সুনক ভারত থেকে ব্রিটেনে কাজ করতে যাওয়া পেশাদারদের জন্য কঠিন নীতি নিয়েছিলেন। নতুন জমানায় সেসব বিধিনিষেধ কমবে বলেই আশা করছেন কূটনীতিকরা। কাশ্মীরের কথা বলি। কিয়র স্টার্মারের আগে লেবারদের নেতা ছিলেন জেরেমি করবিন। তিনি কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস করান। করবিনের আমলে লেবার কনফারেন্সে প্রস্তাব পাস হয় যে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এজন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছে দরবার করবেন লেবাররা। তবে স্টার্মার লেবার পার্টির দায়িত্ব পেয়ে কাশ্মীর ইস্যুতে দলের অবস্থান বদলের পথে হাঁটেন। প্রবাসী ভারতীয়দের সম্মেলনে এও বলেন যে কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। ভারত-পাকিস্তান মিলেই তার সমাধান করবে। তাতে লেবার পার্টি কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। ফলে আমার মনে হয় যে স্টার্মারের নেতৃত্বে ব্রিটেনের নতুন সরকার কাশ্মীর ইস্যুতে কোনও ভারত-বিরোধী পথে হাঁটবে না। আরও একটা খবর আমি বেশ জোরালোভাবেই পাচ্ছি। কিছুদিন আগেই লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসকে নিশানা করে খালিস্তানিরা। খালিস্তান সমর্থকদের প্রতি কড়া অবস্থান নেওয়ার জন্য নতুন লেবার সরকারের কাছে অবশ্যই দাবি তুলবে দিল্লি।

ব্রিটেনে নতুন মন্ত্রিসভায় এবার বঙ্গযোগ। কিয়র স্টার্মারের ক্যাবিনেটে জায়গা পেলেন লিজা নন্দী। সংস্কৃতি, সংবাদমাধ্যম ও খেলা। একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্বে এলেন তিনি। ব্রিটেনের এই নতুন মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার যোগসূত্র তাঁর বাবার সূত্রে। ১৯৩৬ সালে লিজার বাবা দীপক নন্দীর জন্ম কলকাতায়। সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনী দীপক ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ার জন্য লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন পঞ্চাশের দশকে। ১৯৭২-এ এক ব্রিটিশ মহিলাকে বিয়ে করেন। তাঁদেরই কনিষ্ঠ সন্তান লিজা। ১৯৭৯ সালে ম্যাঞ্চেস্টারে জন্ম। ২০১০ সালে লেবার পার্টির টিকিটে প্রথমবার এমপি হন লিজা। এবার উইগান কেন্দ্র থেকে ১০ হাজার ভোটে জিতেছেন তিনি। শুধু লিজা নন। এইবার লেবার পার্টির জয়জয়কারের মধ্যে অন্য এক রেকর্ডও হয়েছে। ব্রিটেনে এবার জিতেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ২৮ জন সাংসদ। এমন নজির কখনও হয়নি। গতবার হাউস অব কমন্সে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংসদের সংখ্যা ছিল ১৫। এবারের ভোটে ১০৭ জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী হন। যাঁদের এক চতুর্থাংশই জিতেছেন। ভারতীয়দের পাশাপাশি ব্রিটেনের ভোট নিয়ে কৌতুহল ছিল বাংলাদেশিদেরও। চতুর্থবার জিতেছেন শেখ হাসিনার বোনঝি টিউলিপ সিদ্দিক। লেবার পার্টির প্রার্থী টিউলিপ ১৫ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছেন। এই নজিরের মধ্যেই আরও এক রেকর্ড হল বিলেতে। এই প্রথম ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী হলেন কোনও মহিলা। অক্সফোর্ডের প্রাক্তনী রাচেল রিভস এর আগে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের অর্থনীতিবিদ ছিলেন।

এবার কি আরও একটা যুদ্ধ। পাক ডিফেন্স মিনিস্টার খোয়াজা আসিফ বিবিসিকে যা বললেন তাতে তো যুদ্ধই মনে হচ্ছে। তিনি বললেন জঙ্গিদের নিকেশ করতে আফগানিস্তানের মাটিতেও হানা দেবে পাক সেনা। ভারতের হাতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের শিকার হয়েই কি ওদেরও এমন সাধ জাগল। এদিকে হবে না বুঝে ওদিকে খাপ খোলার চেষ্টা। সে আপনারা যা ভাববেন ভাবুন। আমি খবরটা আপনাদের দিই। গত শনিবারই আমি আপনাদের বলেছিলাম পাক-তালিবানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে পাক সেনা। এই খোয়াজা আসিফই জানিয়েছিলেন সেটা। জঙ্গিদমন অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন আজম-ই-ইস্তেকাম। খাইবার-পাখতুনখোয়ায় পাক তালিবান। ও বালুচিস্তানের বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চালাবে পাক সেনা। তারই একটা এক্সটেনশন ডুরান্ড লাইনের ওপারে আফগানিস্তানের মাটিতেও চলবে বলে জানিয়ে দিলেন আসিফ। আপনাদের মনে করিয়ে দিই, ২০২২ সালে পাক তালিবানের সঙ্গে ইসলামাবাদের ডায়লগ ভেস্তে গিয়েছিল। এরপরই আফগান সীমান্তে শুরু হয় পাক সেনার জঙ্গিদমন অভিযান। তখন তালিবান অভিযোগ করে তাদের দেশে বোমা ফেলেছে পাক সেনা। পাকিস্তান সেই অভিযোগও এবার মেনে নিল। পাক ডিফেন্স মিনিস্টার এটাও বললেন যে আমরা আফগানিস্তানে অভিযান চালাচ্ছি। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। ফারাক হল এটাই যে এবার সন্ত্রাসদমন অভিযান আরও বড় আকারে শুরু করার কথা জানিয়ে দিল ইসলামাবাদ। আমার মনে হয় এর পিছনেও চিনেরই কলকাঠি রয়েছে। গত শনিবার আমি এও আপনাদের বলেছিলাম যে চিন-পাক ইকনমিক করিডর, সিপেক-সহ পাকিস্তানে চিনের টাকায় চলছে নানা পরিকাঠামো প্রকল্প। গ্বদর বন্দরেও টাকা ঢেলেছে চিন। এইসব প্রকল্পে প্রচুর চিনা নাগরিক কাজ করছেন। আর তাঁদের ওপর লাগাতার হামলা করে যাচ্ছে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এই অবস্থায় মনে করা হচ্ছে, ইসলামাবাদকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেজিং। তোমরা যদি জঙ্গি সামলাতে না পারো, তা হলে পাকিস্তান থেকে আমরা লগ্নি তুলে নেবো। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানেও ব্যবসার আশায় টাকা ঢেলেছে চিন। এখন পাকিস্তানে তাড়া খেয়ে জঙ্গিরা যদি দলে দলে আফগানিস্তানে পালিয়ে যায়। তাহলে সেখানেও চিনের বিপদ। তাই পাকিস্তানকেই চাপ দিয়ে ঘরে ও বাইরে দু-জায়গাতেই জঙ্গিদের নিকেশ করিয়ে দিতে চাইছেন জিনপিং। পাকিস্তান বুঝতেও পারছে যে তাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কাজ হাসিল করতে চাইছে বেজিং। কিন্তু তাদের কোনও উপায় নেই। চিনা লগ্নি পাততাড়ি গোটালে আর্থিক সমস্যা যে আরও বাড়বে। ফলে এবার ভারতীয় উপ-মহাদেশেই যুদ্ধের আগুন ছড়াবে কিনা, এনিয়ে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পরের খবরে আসি। অশ্বগন্ধা। সারা দুনিয়ার কাছে প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের উপহার। আমরা সবাই জানি এই গাছের শিকড় থেকে পাওয়া যায় কত উপকার। ডায়াবেটিস। হাই ব্লাড প্রেসার। স্ট্রেস দূর করে অশ্বগন্ধা। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। হাইপারটেনশন কমায়। আর্থারাইটিসের চিকিত্‍সাতেও দারুণ কার্যকরী। সায়েন্টিফিক নেম উইদানিয়া সোমনিফেরা। পশ্চিমী দুনিয়া ডাকে ইন্ডিয়ান জিনসেং নামে। এহেন অশ্বগন্ধাকে ব্যান করে দিয়েছে ডেনমার্ক। যার তীব্র প্রতিবাদ করেছে আমাদের আয়ুষ মন্ত্রক। বিষয়টা একটু খুলে বলি। ২০২০ সালে Technology University of Denmark অশ্বগন্ধা নিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করে। তাতে দাবি করা হয় অশ্বগন্ধা সেবনে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। লিভার খারাপ হয়। শরীরে সেক্স হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে সমস্যা হয়। চার বছর আগের সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই অশ্বগন্ধাকে ব্যান করে দিয়েছে ডেনমার্ক। ড্যানিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট নিয়ে Sweden, Finland, Australia, Netherlands, France, Turkey-সহ European Union-এর দেশগুলোয় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। আয়ুষ মন্ত্রকের সচিব রাজেশ কোটেচা দাবি করেছেন, ড্যানিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির অভাব রয়েছে। ওই রিপোর্টের পর আরও অন্তত ৪০০ পেপার প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে অশ্বগন্ধার উপকারিতার কথা বলা হয়েছে। গতকালই একটা সায়েন্টিফিক জার্নালে ডেনমার্কের দেওয়া ওই পুরনো রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নিবন্ধের লেখক ডক্টর ভূষণ পট্টবর্ধনের কথায় ড্যানিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট ভিত্তিহীন। সেখানে অশ্বগন্ধার উপকারিতার কথা বলাই হয়নি। আয়ুষ মন্ত্রক একটা বিশেষজ্ঞদের কমিটিও তৈরি করেছে। যাঁরা ড্যানিশ রিপোর্টের ত্রুটিগুলো খুঁটিয়ে দেখে অশ্বগন্ধার উপকারিতা সম্পর্কে সব জানাবে। আপনাদের বলে রাখি আমেরিকার University of Mississippi-ও ডেনমার্কের দেওয়া রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অশ্বগন্ধা উত্‍পাদনে ভারত বিশ্বে প্রথম। বছরের ৪ হাজার টন শিকড় তৈরি হয়। সারা দুনিয়ার অশ্বগন্ধা রফতানির ৪২ শতাংশ ভারতের হাতে। সম্প্রতি আমেরিকায় দ্বিগুণ হয়েছে এই আয়ুর্বেদিক ওষুধের বিক্রি। ফলে আমাদের চুপ করে থাকার কোনও জায়গাই নেই।

ভোট মিটতেই বেড়ে গেল মোবাইলের খরচ। জানেন কি আমার-আপনার, আমাদের সকলের পকেট থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে যাবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। দেশবাসীর এই টাকা গিয়ে জমা পড়বে ৩ বড় মোবাইল পরিষেবা সংস্থার ঘরে। কেউ হয়ত বলবেন বেসরকারি সংস্থা মোবাইলের মাসুল বাড়িয়েছে। তার সঙ্গে ভোটের কী সম্পর্ক। সম্পর্ক নাই থাকতে পারে। তবে আমরা এরকম জিনিস আগেও দেখেছি। তেল কোম্পানিগুলোও যেমন ভোট থাকলে তা মিটে যাওয়ার পর তেলের দাম বাড়ায়। টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট বলছে, সারা দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১৯ কোটি। এর মধ্যে তিন বড় বেসরকারি সংস্থার দখলেই ৯০ শতাংশের বেশি গ্রাহক। ১০ শতাংশেরও কম গ্রাহক রয়েছে বিএসএনএল এবং এমটিএনএলের। ফলে প্রায় ১১০ কোটি মানুষকে এই জুলাই মাস থেকে মোবাইলের পিছনে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। মোটামুটি একটা হিসেব যদি আপনাদের দিই। জিও খরচ বাড়িয়েছে ১২-২৭ শতাংশ। এয়ারটেল ১১-২১ শতাংশ। আর ভোডাফোন ১০-২৪ শতাংশ। গড়ে একজন ভারতীয়র মাসে মোবাইলের পিছনে খরচ বাড়ছে ২৫ টাকার বেশি। মোবাইল সংস্থাগুলোর এই যে বাড়তি আয়। তার একটা অংশ কিন্তু সরকারের ঘরেও জমা পড়ে যাবে। ফলে ওদিক থেকে কোনও মন্তব্য আমরা শুনতে পাইনি। মোবাইল খাওয়ার জিনিস নয়। তবে আজকের দিনে এর গুরুত্ব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়। ফলে, বেসরকারি সংস্থা হলেও সার্ভিস প্রোভাইডারদের ওপর একটা সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও তার প্রয়োগ থাকা উচিত বলেই আমার মনে হয়।

১৭ বছর পর ভারতের টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের রেশ এখনও আমাদের মন থেকে যায়নি। আমরা সবাই জানি ভারতে এখন ক্রিকেট মানেই টাকা। কিন্তু কত টাকা উড়ল বলুন তো। একটা হিসেব পেলাম। আপনাদের না জানিয়ে পারছি না। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সময় ১০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনের রেট ছিল ২০ লক্ষ টাকা। ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনের রেট ৬৫ লক্ষ টাকা। ভারতে তো বটেই। দুনিয়ার কোনও দেশেই, যে কোনও ধরনের প্রোগ্রামে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের এই রেট বিরল। ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে ইউরোপিয়ান দশর্কদের উন্মাদনাকেও টেক্কা দিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট দর্শকরা। যার ফল বিজ্ঞাপনের এই রেট। ২০২৪ থেকে ২০২৭। এই ৪ বছরে ভারতে আইপিএল-সহ সব ক্রিকেট ম্যাচ দেখানোর সত্ত্ব পেয়েছে ডিজনি স্টার। টেলিভিশন এবং ওটিটি, দুটোই। এজন্য তারা আইসিসি-কে দিয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। যার একটা বড় অংশ ভারতীয় বোর্ডও পাবে। শুধুমাত্র টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখিয়েই ১৮ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে তারা। বুঝতেই পারছেন আমার-আপনার ক্রিকেট প্রেমে কর্পোরেটের ব্যবসাটা কেমন হচ্ছে। আর এই রেজাল্ট দেখার পর এবার তো টেলিভিশন রাইটসের খরচও বেড়ে যাবে। ফলে, ক্রিকেট বোর্ডের লক্ষ্মীলাভের অঙ্কও ভালোই বাড়বে।

 

 

 

 

Follow Us: