আলিপুরদুয়ারঃ সামনেই পুরোভোট । তাই এবার পানীয় জল নিয়ে আলিপুরদুয়ারে (Alipurduar) শুরু হয়েছে রাজনীতি।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে আলিপুরদুয়ার পুরসভার ডিউ ড্রপ পানীয় জল প্রকল্প। ফলে পরিশ্রুত পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হয়ে আছেন পুরসভার চার, পাঁচটি ওয়ার্ডের প্রায় কুড়ি হাজার বাসিন্দা। বন্ধ জল প্রকল্পের পরিত্যাক্ত ঘর এখন সমাজ বিরোধীদের আঁখড়ায় পরিণত হয়েছে। তবে বন্ধ জল প্রকল্প এলাকার পাশেই বিদায়ী তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা নতুন জল প্রকল্প গড়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেই কাজও ঢিলে তালে চলছে বলে অভিযোগ।
সামনের পুরভোটের আগে একদিকে জল প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া অপর দিকে নতুন জল প্রকল্পের কাজের গতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ছে সব শাসকদল। প্রবীণ নাগরিক সংস্থার সম্পাদক ল্যারি বোস বলেন, ” ৮৯ লক্ষ টাকার প্রজেক্ট । এটা ইগোর লড়াই এর জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন আইসিইউতে। সামনে ভোট তাই ভোটের রাজনীতি শুরু হয়েছে এই জল প্রকল্প ঘিরে। তৎকালীন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের সাহায্যে ডিউ ড্রপ জল প্রকল্প চালু হয়েছিল।কিন্তু তৃণমূল বোর্ডের ব্যর্থতা ও ইগোর লড়াই এর জন্য প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে আছে। এতে নিউ আলিপুরদুয়ার এলাকার প্রায় কুড়ি হাজার বাসিন্দা পরিশ্রত জল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, “আলিপুরদুয়ার শহরের সমস্ত পরিকল্পনা মহম্মদ বিন তুঘলকের মত। এখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌচ্ছে দেওয়া। বিগত দিনে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি জয়লাভ করেছে। মানুষের ভোট নিয়েছে। এখানে ১৬টি ওয়ার্ডে জল প্রকল্প শুরু হয়েছিল।এটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে। এখন সামনে ভোট। তাই ওটা নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে।ভোটের আগে নাটক চলবে। মানুষের বাড়িতে এখন ও পানীয় জল পৌঁছায়নি।পানীয় জলের প্ল্যান্ট নতুন করে খোলার চেষ্টা হচ্ছে।কেন হচ্ছে মানুষ তা বোঝেন।”
অন্যদিকে, আলিপুরদুয়ার পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ কর বলেন, “আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এই জল ভালো। এটি চালুর জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এটা দেখে গেলাম। আবার নতুন সংস্থাকে দেব। লাভের ব্যাপার নেই। অল্প টাকায় যাতে জল পান সেদিকে জলের উপর করের বোঝা চাপাব না। ”
আলিপুরদুয়ার পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার প্রাক্তন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের আমলে নিউ আলিপুরদুয়ার এলাকায় একটি পানীয় জল প্রকল্প গড়া হয়। কোল ইন্ডিয়ার আর্থিক সহযোগীতায় এবং পুরসভার যৌথ উদ্যোগে আলিপুরদুয়ার মাতৃ সদনের পিছনে ওই প্রকল্পটি গড়া হয়েছিল। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয় ডিউ ড্রপ পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্প। এটি গড়তে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়ছিল।
জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ২ জুন বাম পরিচালিত পুরসভার নিউ আলিপুরদুয়ার এলাকায় ওই প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় প্রকল্পটির উদ্বোধন করেছিলেন দেবপ্রসাদ রায়। পুরসভার জল প্রকল্প চালানোর জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দায়িত্ব দিয়েছিল। প্রকল্পটি চালুর পরেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ওই প্রকল্পটি থেকে প্রথম দিকে পুরসভার ৩,৪,১৬,১৯ এবং ১৫, ১৬ নাম্বার ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের কাছে জল সরবরাহ করা হয়।
জানা গিয়েছে, মূলত জারে করে এখান থেকে জল বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দিতেন প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িতরা। ১০ ও ২০ লিটারের জারে করে বাসিন্দাদের বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া হত। প্রতি লিটার জলের দাম ছিল মাত্র ১ টাকা। দিন-দিন বাসিন্দাদের মধ্যে এই জলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পুরসভার সব ওয়ার্ডেই জল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন বাম পুরবোর্ড। জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে শেষের দিকে পুরসভা দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস। তার পরেও প্রায় আড়াই বছর জল প্রকল্পটি চালু ছিল। কিন্তু অভিযোগ, ওই জল প্রকল্পের জন্য প্রচুর বিদ্যুৎতের বিল দিতে হত পুরসভাকে। কিন্তু বিদ্যুৎ দপ্তর ঠিকমতো বিল না পাওয়ায় প্রকল্পটি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়। অভিযোগ, একদিন বিদায়ী তৃণমূল পুরবোর্ডে তৎকালীন চেয়ারম্যান আশিষ দত্ত প্রকল্পটি গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে আজ প্রায় তিন বছরের বেশী সময় ধরে বন্ধ হয়েই পড়ে আছে পুরসভার নিজস্ব ডিউ ড্রপ পানীয় জল প্রকল্প।
জল প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরসভা এলাকার প্রায় কুড়ি হাজার বাসিন্দা এখন পরিশ্রুত পানীয় জল থেকে বঞ্চিত বলে জানা গেছে। ফলে পানীয় জল না পেয়ে টিউবওয়েলের আয়রন যুক্ত জল খেতেই বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: CRPF Firing: মধ্যরাতে হঠাৎই কী হল, ঘুমন্ত ৭ সহকর্মীদের উপর গুলি চালালেন সিআরপিএফ জওয়ান! মৃত ৪