আলিপুরদুয়ার : ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতেন টোটো উপজাতির জন্য কিছু করার। স্বপ্ন দেখতেন, যদি পৃথিবীর সব জনজাতির পৃথক অক্ষর ও ভাষা থাকে! যদি টোটো উপজাতির (Toto Tribe) মানুষরা তাঁদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে পারে, থাকে নিজস্ব অক্ষর। সেই স্বপ্নকেই বাস্তবায়ন করতে কাজ শুরু দীর্ঘদিন আগে। তিনি টোটোদের নিয়ে লিপি তৈরি করেছেন। টোটো ভাষায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ তৈরি করেছেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতিতেই এবার সরকার বাংলার টোটো সাহিত্যিকের হাতে তুলে দিচ্ছে পদ্ম পুরষ্কার (Padma Shri Award)।
একদিন আগেই সামনে এসেছে তালিকা। এবারের পদ্ম প্রাপকদের তালিকায় রয়েছে বড় চমক। পদ্ম পুরষ্কার পাচ্ছেন মোট ১০৫ জনের নাম। তারমধ্যে ছয়টি পদ্মবিভূষণ, নয়টি পদ্মভূষণ এবং ৯১টি পদ্মশ্রী পুরস্কার থাকছে। এই তালিকাতেই রয়েছেন বাংলার টোটো সাহিত্যিক ধনিরাম টোটো। টোটো হরফ ও অক্ষর তৈরির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্যে এ বছর পদ্মশ্রী পুরষ্কার পাচ্ছেন ৫৯ বছরের এই সাহিত্যিক।
তিনি মাটির মানুষ। চেয়েছিলেন নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে। তিনিই শেষ অবধি করে দেখিয়েছেন। ৩৭ শব্দের অক্ষর রাশি তৈরি করেছেন টোটো উপজাতির জন্য। সঙ্গে টোটো সাহিত্যে প্রচুর কবিতা, উপন্যাস ও রম্যরচনা সৃষ্টি করেছেন। টোটো সমাজের জন্য নিজের ভাষায় বাঁচার, পড়াশোনা করার নিজস্ব পথ খুলে দিয়েছেন এই আত্মভোলা মানুষটি।
থাকেন আলিপুরদুয়ারের কাছে ভারত-ভুটান সীমান্তের কোল ঘেঁষে থাকা টোটোপাড়ায়। ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার দফতরের টোটোপাড়ায় ইনচার্জ হিসেবে কাজও করেন। ইতিমধ্যেই তাঁর ৫টি বইও প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে ‘ধানুয়ার টোটো কথামালা’ দারুণ প্রশংসাও কুড়িয়েছে। কবিতাও লেখেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে। তিনি টোটোদের নিয়ে লিপি তৈরি করেছেন। টোটো লোকসংস্কৃতি নিয়ে নানা কাজের জন্য ১৯৯৭ সালে তাঁকে তাম্রপত্র দিয়ে সম্মানও জানিয়েছে রাজ্য সরকার। আলিপুরদুয়ারের এই আদিম জনজাতি টোটোদের এখন জন সংখ্যা প্রায় ১৫০০ জন। ধনীরামের পদ্মশ্রী পাওয়ায় খুশি এলাকার বাসিন্দারাও।