খতিয়ানই এবার শাহের হাতিয়ার, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, তুলে ধরলেন বাংলার খামতি

বাংলায় ১৮ আসন পাওয়া ইস্তক এই প্রথম রাজনৈতিক প্রতিআক্রমণ ছেড়ে বাংলার পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। ঠিক কোন কোন জায়গায় রাজ্য পিছিয়ে গিয়েছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

খতিয়ানই এবার শাহের হাতিয়ার, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, তুলে ধরলেন বাংলার খামতি
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Dec 20, 2020 | 7:27 PM

বোলপুর: বীরভূমের লালমাটিতে চোখ ধাঁধানো রোড শো করার পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। সেই বৈঠক থেকে রাজ্যের বিরুদ্ধে একের পর এক জোরলো আক্রমণ করেন। বাংলায় ১৮ আসন পাওয়া ইস্তক এই প্রথম রাজনৈতিক প্রতিআক্রমণ ছেড়ে বাংলার পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। ঠিক কোন কোন জায়গায় রাজ্য পিছিয়ে গিয়েছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে এই ‘অধঃপতনের’ জন্য কে দায়ী, তাও বারাবর জানতে চান।

রাজ্যের একাধিক খতিয়ান তুলে ধরে এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার সময় দেশের জিডিপি-র এক তৃতীয়াংশ ছিল বাংলার। যেটা আজ কমতে কমতে বহু নীচে নেমে গিয়েছে। তিন দশকের বাম ও এক দশকের তৃণমূল শাসকের ফলাফল এটা। ১৯৪৭ সালে গোটা দেশের শিল্পে পশ্চিমবঙ্গের অংশীদারিত্ব ছিল ৩০ শতাংশ। সেটা বর্তমানে কমতে কমতে ৩.৫ শতাংশে নেমে এসেছে’ বলে দাবি করেন শাহ। এই পতনের দায় কার, মুখ্যমন্ত্রী ও বাম দলের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চান তিনি।

অমিতের আরও দাবি, বাংলায় রোজগারের নিরিখে ১৯৬০ সালে সন্তুষ্টি অনুপাত ছিল ২৭ শতাংশ। সেটাই এখন নেমে এসেছে ৪ শতাংশে। একই সময় ব্যক্তিপ্রতি মাথাপিছু আয় মহারাষ্ট্রের থেকে প্রায় দ্বিগুণ ছিল পশ্চিমবঙ্গের। সেটা এই সময় দাঁড়িয়ে মহারাষ্ট্রের অর্ধেকও নয় বলে দাবি করেন তিনি। একটা সময় ছিল, যখন গোটা দেশের মধ্যে বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানির ৪২ শতাংশই হত এই রাজ্য থেকে। যা বর্তমানে কমে প্রায় ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। কার জন্য, কে নেবেন এর দায়, ফের জানতে চান তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে চলেন, ১৯৫০-এর দশকে দেসের ফার্মা (ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা) ইন্ডাস্ট্রির প্রায় ৭০ শতাংশই ছিল পশ্চিমবঙ্গে। সেই হার এখন কমে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলার জুট শিল্প যার নাম-ডাক একসময় দেশব্যাপী ছিল, সেগুলিও ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কে দায়ী এর জন্য? ২০১৮-১৯ সালে ব্যক্তিপ্রতি আয় বৃদ্ধির নিরিখে গোটা দেশের সকল রাজ্যের মধ্যে বাংলা নেমে এসেছে ২২তম স্থানে। এই দায়-ই বা কার?

আরও পড়ুন: শুভেন্দুই কি একুশে বিজেপির মুখ? প্রশ্নের উত্তরে অকপট অমিত শাহ

এহেন পরিসংখ্যানের ঝুলি সামনে রেখে অমিত নিজেই বলেন, ‘আমি জানি তৃণমূল এই পরিসংখ্যানকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। তাই আমি বলে রাখছি। আপনারাই একটা জায়গা ঠিক করুন। সেখানে যুব মোর্চার সদস্যরা বির্তকে অংশ নিয়ে আপনাদের জানিয়ে দেবেন এই পরিসংখ্যান কোথা থেকে উঠে এল।’

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি রাজ্যের শাসকদলকে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়তে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি, বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বকেও একটা প্রচ্ছন্ন বার্তা দিয়ে রেখেছেন। সেটা হল- আগামী সময় বাংলার নির্বাচন ঠিক কোন কোন ইস্যুর উপর ভিত্তি করে হতে পারে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আসলে এতদিন বিজেপি নেতাদের প্রচার এ রাজ্যে কিছুটা ‘হাওয়া গরম’ করার কায়দায় হয়েছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকেরা। ভোটে বাংলার মানুষের মন পাওয়ার জন্য যে সেটা কখনই যথেষ্ট নয় তা ভালভাবেই জানেন রাজনীতির ধুরন্ধর শাহ। ফলে এদিন কার্যত মূল ইস্যুগুলিকে সামনে রেখে নির্বাচন লড়ার একটা আবছা রোডম্যাপ তিনি দিয়ে গেলেন। অমিত শাহের এই নতুন ‘পদ্ধতি’ একুশের ভোটের আগে বড় হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন: বাউলের সংসার চলে রেশনের চালে, শাহের পাতে মিনিকেট