বাউলের সংসার চলে রেশনের চালে, শাহের পাতে মিনিকেট

পাতে ভাত, ডাল, পালং শাক, বেগুন ভাজা, পটল ভাজা, আলুপোস্ত। শেষ পাতে যোগ হল চাটনি, পাঁপড়, নলেন গুঁড়ের রসগোল্লা ও নলেন গুড়ের পায়েস।

বাউলের সংসার চলে রেশনের চালে, শাহের পাতে মিনিকেট
বাউলের বাড়িতে অমিত শাহর মধ্যাহ্নভোজ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 20, 2020 | 5:24 PM

বীরভূম: লকডাউনে একটা টাকাও আয় করতে পারেননি। কত টাকাই বা আর জমানো থাকতে পারে এক বাউল শিল্পীর ঘরে। যা ছিল তা অনেক আগেই ফুরিয়েছে সংসারের চাল নুন কেনার গার্হস্থ্য অনুশাসনে। এরপরের ক’টা মাস তাঁদের ভরসা ছিল রেশনের দেওয়া দু’টাকা কিলো দরে চাল আর ডাল। আজ সেই বাসুদেব বাউলের বাড়িতে খেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)! এক্কেবারে শাহি আয়োজন! সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়, অনুপম হাজরা, রাহুল সিনহা প্রমুখ।

শ্যামবাটির বাসুদেবের প্রতিবেশীদের তো বটেই, গোট বাংলা এদিন তাকিয়ে ছিল বাউলের ঘরে শাহের লাঞ্চের মেনুর দিকে। যে মানুষটা রেশনের চালে পেট ভরান, তিনি কীভাবে আপ্যায়ন করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর? কীভাবে মানে রেশনের চালেই কি শাহি-আপ্যায়ন?

সকাল থেকেই বাউলের বাড়িতে মহা তোড়জোর। বাজারহাট আগের দিনই সেরে রেখেছিলেন তিনি। ভোর হতেই হাড়ি চড়িয়ে দিয়েছিলেন উনুনে। শরীরে উত্তেজনা ছিল। কিন্তু এত বড় মানুষটাকে চোখের সামনে দেখে নিতান্ত দেহাতি মানুষগুলোর তখন যেন শরীর দিয়ে হিমস্রোত বইছে। চার পায়া ছোট্ট জলচৌকির ওপর মাটির থালায় কলা পাতায় খেতে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। পাতে ভাত, ডাল, পালং শাক, বেগুন ভাজা, পটল ভাজা, আলুপোস্ত। শেষ পাতে যোগ হল চাটনি, পাঁপড়, নলেন গুঁড়ের রসগোল্লা ও নলেন গুড়ের পায়েস।

তবে কি রেশন চালেই হল রান্না? বাসুদেব বাউলের সরল মনের স্বীকারোক্তি, “আমরা নিজেরা রেশনের চালই খাই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন বলে কথা! ওঁর জন্য বাজার থেকে মিনিকেট চাল কিনে এনেছিলাম। তাতেই রান্না হয়। ওঁ কী আর বারবার আসবেন!”

বাউলের সাদা মনে কাদা নেই। স্বচ্ছ মনে বলেছেন কীভাবে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আপ্যায়নে ত্রুটি না রাখতে । তবে রাজনৈতিক মহলে কিন্তু এই নিয়েই তৈরি হয়ে গিয়েছে জল্পনা। যে মানুষটা রেশনের চালে সংসার চালান, তাঁরই বাড়িতে কি কেবল মধ্যাহ্নভোজ সারতেই গেলেন শাহ?

বঙ্গ রাজনীতির কুশীলবরা যদিও আগে থেকেই দাবি করেন, শাহ ফিরলেই বঙ্গে ফেরে মধ্যাহ্নভোজের রাজনীতি। তাহলে কি সেই স্বার্থ চরিতার্থ করতেই শাহর বাউল ঘরে লাঞ্চ?  শাহ দুপুরের খাওয়া সারলেন, ‘হৃদমাঝারে’র তালে তালও দিলেন, তবে রাজনীতির কুটনীতিবিদরা বলছেন, এর আড়ালেই বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যেই দিয়ে গেলেন ভোটের ঝুলি পূরণের বার্তা।

বাউল গান শুনছেন অমিত শাহ

আরও পড়ুন: দুর্গার ফটো, একতারাতে বরণ করে নেওয়া হল শাহকে, বিতর্ক উস্কে সঙ্গীতভবনেও রাজনৈতিক নেতারা

সফরের প্রথম দিন মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন কৃষক পরিবারে, আজ বাউল বাড়িতে। বাউল সম্প্রদায়ের জন্য আগেই ভাতা ঘোষণা করার জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বছর তিনেক আগে তিনি বাংলায় উত্তরবঙ্গে মাহালি দম্পতির টিনের বাড়িতে খেয়ে যে রীতি চালু করেছিলেন, সেই ধারা বয়ে নিয়ে চলেছেন এখনও। সামনেই একুশের লড়াই। বাংলায় এসে আদিবাসী, মতুয়া, কৃষক, বাউল- বাড়িতে শাহের লাঞ্চকে টেক্কা দিতে তৃণমূল কী পন্থা নেয়, সেটাই দেখার।