বাঁকুড়া: দেশের খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে সপরিবারে দিল্লি রওনা দিলেন বিভীষণ হাঁসদা। বুধবার রাতে দুর্গাপুর থেকে ট্রেনে সপরিবার বিভীষণ রওনা দিলেন দিল্লি। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বিভীষণের এই দিল্লি যাত্রাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন বাঁকুড়ার অখ্যাত চতুরডিহি গ্রামের বিভীষণ হাঁসদা। ওই দিন বাঁকুড়ায় ঝটিকা সফরে গিয়ে বিভীষণের বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজ করেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিভীষণ হাঁসদাকে পাশে বসিয়ে অমিত শাহ যখন মধ্যাহ্নভোজ সারছিলেন সেই সময় বিভীষণ সরাসরি অমিত শাহকে জানিয়েছিলেন, নিজের মেয়ে রচনার দুরারোগ্য ডায়াবেটিস রোগের কথা। বিভীষণকে নিরাশ করেননি অমিত শাহ। তৎক্ষনাৎ দলের নেতা কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন রচনার যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজনে দিল্লির এইমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। তারপর থেকেই মোটামুটিভাবে বিভীষণের মেয়ের চিকিৎসার দেখভাল ও খরচ জুগিয়ে আসছেন বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার।
তবে এর মাঝেই বিভীষণকে নিয়ে কম রাজনীতি হয়নি। বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলের নেতা কর্মী ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা বিভীষণের বাড়ি বয়ে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন বিভিন্ন সাহায্য ও ওষুধ পত্র। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিজেপি এবং তৃণমূল উভয় দলই বিভীষণকে প্রার্থী করার প্রস্তাব দেয়। রাজনীতির ছোঁয়া বাঁচিয়ে সেই প্রস্তাব এড়িয়ে বিভীষণের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় মেয়ে রচনার চিকিৎসা।
গত চার বছর ধরে এভাবে মেয়ের চিকিৎসার ভার বহনের ব্যবস্থা করায় এবার তাই নিজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ইচ্ছা পোষণ করেন বিভীষণ। তিনি বলেন, “ওঁ কথা দিয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন আমার মেয়ের ওষুধের সব খরচা বহন করবেন। সেটাই হচ্ছে। তাই আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে যাচ্ছি। আর কিছু কথা রয়েছে, ওঁর সঙ্গেই বলব।”
এদিকে বিভীষণের এই দিল্লি যাত্রাকে ঘিরেও পিছু ছাড়ল না রাজনীতি। তৃণমূলের দাবি, বিভীষণের মেয়ের যাবতীয় চিকিৎসা ও তাঁর পরিবারকে বিভিন্ন সময় সাহায্য করেছে এ রাজ্যের প্রশাসন ও তৃণমূল। ভোটের আগে তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে নাটক করতে চাইছে বিজেপি। তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “গরিব মানুষ। তাঁর মেয়ে অসুস্থ ছিলেন। ২ বছর আগে যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছিলেন, তাঁর বাড়িতেই তখনই তাঁর নাম জানতে পারি। আমাদের সরকারের তরফ থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হয়। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এতদিন বাদে কেন নিয়ে যাচ্ছে? এগুলো ভোটের আগে চমক।” তৃণমূলের এই অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির দাবি সবটাই আন্তরিকতার উদাহরণ । বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীল রুদ্র মণ্ডল বলেন, “অমিত শাহ তাঁর বাড়িতে ভোজন করেছিলেন। এত সুন্দর ওঁদের ব্যবহার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে আন্তরিকতার বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই মায়া থেকেই তিনি সাহায্য করেছেন। এখন তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানাতে যাচ্ছেন।”