বাঁকুড়া: সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন খোদ জেলাশাসক! বাঁকুড়ায় জেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বর ভরে গিয়েছে এমনই গুরুতর অভিযোগ লেখা বহু লিফলেটে। মঙ্গলবার সকালে ভবনের বন্ধ গেটের বাইরে পোস্টারগুলি পরে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। বাঁকুড়া নাগরিক সমাজ নাম লেখা একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের তরফে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে লিফলেটগুলি। তবে বিষয়টিতে বাদ যায়নি রাজনীতিও। নাগরিক সমাজের লিফলেটের অভিযোগ ঘুরিয়ে সমর্থন করেছে জেলা বিজেপিও। যদিও, জেলা প্রশাসন গোটা বিষয়টি নিয়েই মুখে কুলুপ এঁটেছে। অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে সমগ্র শিক্ষা মিশনের তরফে, এমনটাই দাবি জেলা পরিষদের। এদিকে, লিফলেট ছড়িয়ে পড়ার খবর পেয়ে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ পৌঁছেছে ঘটনাস্থলে। পোস্টারগুলি সরানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই জেলাশাসকের দফতরের বাইরে লিফলেটগুলি পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। সংগঠনটির তরফে সমগ্র শিক্ষা মিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে সেই লিফলেটগুলিতে। তাতে দাবি করা হয়েছে, বাঁকুড়ার সমগ্র শিক্ষা মিশনের আধিকারিক পলাশ কোনার নেতৃত্বে জেলায় সিন্ডিকেট রাজ চলছে। এমনকী বিষয়টিতে জড়িত খোদ জেলা শাসক নিজেও! প্রতিটি কাজে পলাশ কোনা নামে ওই অধিকারিককে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ টাকা না দিলে ঠিকাদাররা বরাত পাচ্ছেন না। এছাড়াও, সেই লিফলেটে স্কুলের ইউনিফর্ম থেকে শুরু করে মুকুটমণিপুরে উন্নয়নমূলক কাজ ও স্বাস্থ্য দফতরের সুস্বাস্থ্য প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, নাগরিক সমাজ নামে ওই সংগঠনের কাছে এরকম আরও অনেক দুর্নীতির খবর রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কার্যত হুমকির সুরে লেখা হয়েছে, ক্রমশ সেগুলি প্রকাশ্যে আনা হবে।
কিন্তু কাদের তরফে ছড়ানো হল এই লিফলেট? কারা যুক্ত রয়েছেন এই সংগঠনের পিছনে? এই রকমই এক গুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তবে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সূত্রের খবর, নিয়ম-নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সম্প্রতি সমগ্র শিক্ষা মিশনের মাধ্যমে মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি একাধিক উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিনিয়ম নজরে আসায় বাতিল করা হয় পূর্ণাঙ্গ টেন্ডারটি। একইভাবে স্বাস্থ্য দফতরের সুস্বাস্থ্য প্রকল্পেও কোটি কোটি টাকার টেন্ডার ডেকেছিল সমগ্র শিক্ষা মিশন। পরবর্তীতে বাতিল হয় সেই টেন্ডারটিও।
সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি প্রকল্পকে ছোট-ছোট একাধিক প্রকল্পে ভেঙে তা ম্যানুয়াল টেন্ডার করে পছন্দের ঠিকাদারদের পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। এহেন বিষয়গুলিকে সামনে রেখেই বাঁকুড়া নাগরিক সমাজের নামে লিফলেট পড়েছে বলে বেশ কিছু মহলের বক্তব্য।
এদিকে, লিফলেটে অরাজনৈতিক সংগঠনের নাম থাকলেও বিষয়টি থেকে বাদ যায়নি রাজনীতি। জেলা বিজেপির দাবি, স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা, সমস্ত দফতরের কাজই সমগ্র শিক্ষা মিশনকে দিয়ে করানো হচ্ছে। দফতরের আধিকারিক পলাশ কোনালের অঙ্গুলিহেলনে ছাড়া কোন ঠিকাদার কাজ পাচ্ছেন না। ফলে দুর্নীতি ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। একইসঙ্গে গেরুয়া শিবিরের তরফেও জেলাশাসকের যুক্ত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তালডাংরার তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “সমগ্র শিক্ষা মিশন এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য দফতরের কাজ করানোর টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। কিন্তু পরে তা বাতিল করা হয়েছে। এর বেশি তাঁর আর কিছু জানা নেই। এছাড়া বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ আসার আগেই জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে সমগ্রশিক্ষা মিশনের তরফে বিনিয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।”