Onnyo Durga: শিক্ষার আলোতেই দারিদ্রের অসুর বধ! বাঁকুড়ার ‘অন্য দুর্গা’ বলছে এক হার না মানা লড়াইয়ের গল্প
Onnyo Durga: দরিদ্র পরিবারে যা হয় এ ক্ষেত্রেও তাই। কাজ না করলে খাওয়া জোটে না। কিন্তু কাজের জন্য পড়া কী থেমে থাকে? না! তাঁরও থামেনি। কিন্তু সে দেখতো যে সময় দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, পড়াশোনা করছে, সে সময় তিনি যেতেন মাঠে ছাগল চড়াতে।
বাঁকুড়ার ছাতনায় আদিবাসী গ্রাম ছাচন। গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা ছোট্ট স্কুল। আমাদের অন্য দুর্গা রেবা মুর্মুর স্বপ্ন জয়ের সাক্ষ্য। ইচ্ছা ছিল উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরানোর পরিবারে শিক্ষা তখন বিলাসিতা। উচ্চ শিক্ষা তো দূরের কথা, স্কুল পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্য পর্যন্ত ছিল না। রেবা বলছেন, “মেয়েদের পড়াশোনা করতে সেই সময় কেউ চাইতো না। তার উপর অর্থাভাব তো ছিলই। আমাকে সবসময় অনেক কিছু কাজ বাড়ির লোকজন করতে বলতো। ওই কাজ না করে বের হলে মার খেতে হতো।”
দরিদ্র পরিবারে যা হয় এ ক্ষেত্রেও তাই। কাজ না করলে খাওয়া জোটে না। কিন্তু কাজের জন্য পড়া কী থেমে থাকে? না! তাঁরও থামেনি। কিন্তু সে দেখতো যে সময় দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, পড়াশোনা করছে, সে সময় তিনি যেতেন মাঠে ছাগল চড়াতে। কিন্তু রেবা সেই বয়সেই উপলব্ধি করলেন দারিদ্রের অসুরকে বধ করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। দিনের কাজ করে রাতে পড়তে যেতেন নাইট স্কুলে।
প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পার করার পর উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির জন্য পুরুলিয়ার আবাসিক বিদ্যালয়ের পথে পাড়ি দিলেন। শুরু নতুন লড়াই। রেবা বলছেন, “যেদিন আমাকে বাড়ি থেকে বিদায় করে সেদিন কিছু বিস্কুট, হাফ টিন মুড়ি আর ৩০ টাকা দিয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওই মুড়ি কতদিন যাবে তা বুঝতে পারছিলাম না। ঘরের লোকজন আর খোঁজ নেয়নি। কিন্তু শিক্ষককেরা আমাকে খুব সাহায্য করেছিল বেড়ে ওঠার সময়।”
কিন্তু, তারপরেও তিনি পারেননি। অচিরেই থেমে যায় তাঁর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন। হেরে যান দারিদ্রের কাছে। একাদশ শ্রেণিতেই থেমে গেল পড়াশোনার পাঠ। রোজগারের জন্য নামতে হল পথে। ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলেন, “রোজগার করাটা সেই সময় বড় হয়ে দাঁড়ায়। টাকার দরকার। একটা এনজিও-তে কাজ শুরু করি।” পরবর্তীতে কর্মসূত্রে যোগ দেন একটা হোমে। সেখানেই দেখা হয় আরও এক অনন্যার সঙ্গে, দেখা হয় আরও এক লড়াকু নারীর সঙ্গে। যাঁর জীবন কাহিনী বদলে দিল রেবা মুর্মুর জীবন। রেবা বলছেন, “ওর জীবনে একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ১৬ জন ওকে ধর্ষণ করেছিল। ওকে পরবর্তীতে আমাদের বাড়িতে আনি। অর্থকষ্ট ছিল। কিন্তু ওকে ভাল রাখার চেষ্টা করি। ইট ভাটায় কাজ করেছি। দু’জনে মিলেই করেছি। ওইভাবেই চলেছে জীবন।”
কিন্তু বাড়িতে থাকতে সমস্যা হচ্ছিল। নির্যাতিতা মহিলাকে জায়গা দিতে অস্বীকার করে সমাজ। সমাজের বিরুদ্ধে রেবার লড়াইয়ে পাশে থাকল না তাঁর পরিবারও। মাথার উপর থেকে চলে যায় ছাদ। কিন্তু লড়াই থামেনি তাতেও। এবার স্কুল তৈরির স্বপ্ন। যা শেষ পর্যন্ত দেখল বাস্তবের মুখ। রেবা বলছেন, “ইট ভাটায় কাজ করতে গিয়ে দুজনে যে টাকা জমিয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে একটা জায়গা কিনি। জায়গার তখন অনেক কম দাম। জায়গা তৈরি হওয়ার পর ২২টা বাচ্চাকে রেখে দিই। ভালবাসার জায়গা থেকেই ওটা করি। পরবর্তীতে গ্রামের বাচ্চদের ডেকে এনে পড়াতাম। সেই থেকেই যাত্রা শুরু।”