বাঁকুড়া: মণ্ডপ থেকে বাড়ি, পুজো সর্বত্রই কোথাও প্রতিমাকে আবার কোথাও প্রতীক হিসেবে ঘটকে সামনে রেখে শক্তির আরাধনা করা হয়। বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে কালীর আরাধনা করা হয়েছে। তবে বাঁকুড়ার সাঁতরা পরিবারে দেখা গেল একেবারে অন্য ছবি। কালীর আসনে কোনও মূর্তি নয়, বসলেন বাড়ির বড় বউ।
বাঁকুড়ার ইন্দাস ব্লকের মির্জাপুর গ্রামের সাঁতরা পরিবারের রীতি একেবারে আলাদা। রাতভর বাড়ির বড় বউমাকে বসিয়ে চিন্ময়ী কালী রূপে পুজো করা হয়। এমন জীবন্ত কালীর পুজো দেখতে ভিড় উপচে পড়ল সাঁতরা বাড়িতে। কালীপুজোর এই ব্যতিক্রমী রীতি নিয়ে অনেক কাহিনিও প্রচলিত আছে।
শোনা যায়, সাঁতরা পরিবারের কোনও এক পূর্বপুরুষ বাড়িতে কালী পুজো করার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্নে নাকি বলা হয়েছিল, মাটির প্রতিমায় নয় সোনা অথবা অষ্টধাতুর বহুমূল্য প্রতিমা তৈরি করে পুজো দিতে হবে। কিন্তু আর্থিক ক্ষমতা তেমন ছিল না। সেই কারণেই নাকি স্বপ্নাদেশে দেবী পরামর্শ দিয়েছিলেন বাড়ির বড় বউমাকে কালী রূপে সাজিয়ে পুজোর নির্দেশ দেন। সেই থেকেই এই রীতি চলে আসছে।
একসময় তালপাতায় ছাওয়া মন্দিরে পুজো শুরু হলেও বর্তমানে সাঁতরা পরিবারের পাকা মন্দিরে দেবী পুজোর আয়োজন করেন পরিবারের সদস্যরা। গত ৩৯ বছর ধরে সাঁতরা পরিবারের গৃহবধূ হীরাবালা দেবীকে পুজোর দিন দেবী রূপে পুজো করা হয়ে আসছে। পুজোর দিন তাঁর গলায় থাকে রক্তজবার মালা। কপালে পরিয়ে দেওয়া হয় রক্তচন্দনের তিলক। সাজানো হয় দেবীরূপে। তারপর তাঁকে দেবীর আসনে রেখে চলে পুজো।
হীরাবালা দেবীর দাবি, পুজোর সময় যেন তাঁর শরীরে ভরে করেন স্বয়ং দেবী। তাঁর নিজস্ব কোনও অনুভূতি থাকে না। এমন ব্যতিক্রমী পুজো দেখতে শুধু সাঁতরা পরিবারের আত্মীয় স্বজনেরাই নয়, কালী পুজোর রাতে ভিড় করেন এলাকার বহু মানুষ।