বাঁকুড়া: গ্রামের ভিতর রাস্তার সামান্য অংশ কংক্রিটের। তা তৈরি হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। কিন্তু গ্রামে পৌঁছনোর জন্য যে কাঁচারাস্তা রয়েছে তার অবস্থা বেহাল। গ্রামে পানীয় জলের সুব্যবস্থা নেই। নামকেওয়াস্তে গ্রামে আইসিডিএস চললেও ওই কেন্দ্রে চলে চূড়ান্ত বেনিয়ম। বারবার বিষয়গুলি প্রশাসনের নজরে এনেও লাভ হয়নি। এবার উপ নির্বাচনের আগে তাই ভোট বয়কটের ডাক দিলেন বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের বোড়দা গ্রামের মানুষ। গ্রামবাসী এতটাই ক্ষুব্ধ যে নির্বাচনের আগে আজ স্থানীয় বিএলও গ্রামবাসীদের ভোটার স্লিপ দিতে গেলে তা না নিয়ে বিএলওকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের হাড়মাসড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বোড়দা গ্রাম যেন এক নেই রাজ্য। গ্রামের ভিতরের রাস্তার সামান্য অংশ পাকা হলেও এই গ্রামে যাওয়ার জন্য কিলোমিটার তিনেক রাস্তার অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। এই বেহাল রাস্তা পেরিয়ে গ্রামে যেতে চায় না কোনও অ্যাম্বুলেন্স,দমকলের ইঞ্জিন। গ্রাম থেকে ২ কিলোমিটার দূরে কুলডিহা গ্রামের বুথে ভোট দিতে যান গ্রামের মানুষ।
বোড়দা থেকে কুলডিহা গ্রামের বুথে যেতে হলে ঝোপঝাড় সরিয়ে গ্রামবাসীদের যেতে হয়। চন্দ্রবোড়ার উৎপাতে যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই রীতিমত দুঃসাধ্য। গ্রামে পানীয় জলের পাইপ লাইন পৌঁছলেও সেই পাইপ লাইনে জলের সংযোগ করা হয়নি। পানীয় জলের সরবরাহের জন্য ৪ টি টিউবওয়েল থাকলেও ১ টি টিউবওয়েলের জল ব্যবহার করা যায়। ওই একটি টিউবওয়েল গ্রামের একশো পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করতে গ্রামের মানুষকে নির্ভর করতে হয় পার্শ্ববর্তী নদীর জলের উপর।
স্থানীয় আইসিডিএস কেন্দ্রের খাবারের মান নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে গ্রামবাসীদের। গ্রামের মানুষ পাননি আবাস প্রকল্প সহ অন্যান্য প্রকল্পের সুযোগ সুবিধাও। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসন গ্রামের এই অবস্থার কথা জানেন না তেমন নয়। কিন্তু গ্রামবাসীদের দাবি বোড়দা গ্রামের মানুষের সমস্যাগুলি সমাধানে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
বস্তুত, আগামী ১৩ নভেম্বর বাঁকুড়ার তালডাংরা বিধানসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচন। সেই উপ নির্বাচনের আগে বোড়দা গ্রামের মানুষ এবার ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সমস্যাগুলির সমাধান না হলে তাঁরা কোনও ভাবেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাবেন না বলে শপথ নিয়েছেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের মানুষের ক্ষোভ এতটাই যে স্থানীয় বিএলও আজ গ্রামে ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে গেলে তাঁকেও ফিরিয়ে দেন গ্রামবাসীরা।
এবার কী টনক নড়বে প্রশাসনের? গ্রামের মানুষের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে প্রশাসন? নাকি অন্যান্য বারের মতো এবারও গ্রামবাসীদের শুধুই মিলবে প্রশাসনিক আস্বাস? তবে গ্রামবাসীরা বলছেন এবার আর শুধু শুকনো প্রতিশ্রুতিতে চিঁড়ে ভিজবে না।
গ্রামবাসী ছায়ারানি সুলেখা লোহার বলেন, “একটা আইসিডি ম্যাডাম নেই। রাস্তাঘাট ভাল হোক। রাস্তা দেখতে মেন্টাল হয়ে যাবেন। পানীয় জলের অসুবিধা। নদীর জল খেতে হয়। একটা ভোটও দেব না। প্রতিবার মজা হচ্ছে ?” বিএলও ছায়ারাণী লায়েক বলেন, “আমি আর কী করব। সুপারভাইজারকে জানাব কেউ ভোটার স্লিপ নিচ্ছে না।”