প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার পর দিনই বাঁকুড়ায় সভা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বাঁকুড়ার কোতুলপুর, ইন্দাস ও বড়জোড়ায় মোট তিনটি জনসভা রয়েছে নেত্রীর। রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের সভা থেকে অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলে একের পর এক বাণে বিদ্ধ করেছেন নেত্রী। ভোট বঙ্গে (West Bengal Assembly Election 2021) বাঁকুড়ার কোতলপুরের সভা থেকে মমতা বললেন, “আমার নিঃশ্বাস যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ এক ইঞ্চিও জমি ছাড়ব না।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কী কী বললেন, দেখে নিন এক নজরে…
সিপিএম আমার মাথা ভেঙে চৌচির করে দিয়েছিল। আমাকে ব্রেন অপারেশন করাতে হয়েছিল। আমাকে ওরা নর্দমায় ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল। এক জন পুলিশ গুরুপদ সোম বলে আমাকে বাঁচিয়েছিল। তখনও মৃত্যু থেকে ঘুরে এসেছিলাম। তারপর গার্ডেনরিচের ঘটনা। আমার গাড়ি ভাঙা হয়েছিল। আমাকে লাথি মারছে, ঘুষি মারছে। আমার চোখে মারা হয়েছে। বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আমার গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আমার গাড়ি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তারপর গুলি চালিয়েছিল। হঠাৎ একটা ছেলে এসে হাত তুলে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। গুলিটা আমার কপালে লাগার বদলে ওর হাত ফুটো করে বেরিয়ে গেল। এই ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটেছে। আমার দুটো চোখ অপারেশন করাতে হয়েছে।
বিরিয়ানি দিলে খাবেন না, কিছু মিশিয়ে দেবে। চা দিলেও খাবেন না, পান দিলে খাবেন না, কিছু মিশিয়ে দেবে। আর আপনি ঘুমিয়ে পড়লে ভোটটা গেল। বাড়িতে গিয়ে ভাত-ডাল খাবেন। এক মাস উল্টোপাল্টা খাবেন না, ভোট মেশিন পাহাড়া দিতে হবে।
ভোট মেশিন ভাল করে পরীক্ষা করবেন। না হলে আপনার ভোট আগেই কেউ দিয়ে দেবে। ভোট হয়ে গেলে পাহাড়া দিতে হবে। অনেক পুলিশ আসবে। পুলিশ যদি বলে দিদি আপনি চলে যান, আমি দেখছি। অনেক পুলিশ আসবে। সবার ওপর ভরসা করা যাবে না। অনেকে বিজেপির হয়ে কাজ করবে। পুলিশের ওপর ভরসা রয়েছে। তবুও ভোট মেশিন পাহাড়া দিতে হবে।
মা বোনেদের বলতে এসেছি। যদি আপনারা আমাকে চান, একটা করে ভোট দেবেন। আগামী দিনে ১০ লক্ষ মেয়ের সেল্ফ হেল্প গ্রুপ করে দেব। আরও ব্যাঙ্কের ঋণ দেব।
বহিরাগত গুন্ডাদের নিয়ে এসেছে। গুন্ডা দিয়ে মা বোনেদের আত্মমর্যাদা লুঠ করবে। বাংলা যাতে বাংলাতে থাকে, তার দায়িত্ব আপনাদের। হাতা, খুন্তি নিয়ে তাড়া করবেন।
বাঁকুড়ায় ৭০ হাজার মানুষের বাড়িতে জল পৌঁছে গিয়েছে। ইন্দাসে কলেজ হয়েছে। স্কুল তৈরি হয়েছে। ৯৫ হাজার রাস্তা তৈরি করেছি। ৪৬ হাজার রাস্তা তৈরি করব। রেশন বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে। যাঁরা রেশন পান না, তাঁরা নাম তুলিয়ে নেবেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড। ইন্দাসে বললেন মমতা
আমি রাজ্য, কেন্দ্র সব পুলিশকে ভরসা করি। আমি জানি পক্ষপাতিত্ব হবে না। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বিষয়, ভোটের মেশিন পাহাড়া দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। ২০-৩০ জন করে ভোটের মেশিন পাহাড়া দেবেন।
বাইরে থেকে বর্গী আসছে। বর্গী ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে মা বোনেরা জোট বাঁধুন। ওরা ভেবেছিল আমি পায়ে চোট পেলে আর বাইরে আসব না। আমার নিঃশ্বাস যতক্ষণ চলবে, ততক্ষণ এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না। মা বোনেদের জীবন বাঁচানোর লড়াই এই লড়াই। মনে রাখবেন, আমি ভাঙি তবু মচকাই না।
আমরা ৫০ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ দিয়েছি পঞ্চায়েতে, ওরা ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ দিচ্ছে। আপনারা ভোট দিন, না হলে বিজেপি এনপিআর দেখাবে। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে ওরা টুকলি করে। পরিবর্তন বাংলায় হবে না, পরিবর্তন দিল্লিতে হবে।
সবার বাড়িতে বাড়িতে রেশন পৌঁছে দেবে সরকার। বাড়ির মেয়েরা ৫০০ টাকা করে হাত খরচা পাবেন। কালা কৃষি আইন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। গ্যাসের দাম ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা করেছে। নির্বাচনের আগে ১০০ টাকা কমাবে, তারপর আবার বাড়াবে। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট, কোল উন্ডিয়া, বিএসএনএল, সেল বন্ধ করে দেবে বলছে। সব বিক্রি হয়ে যাবে। খাবেন কি?
জয়পুর আজ বদলে গিয়েছে, রেল লাইন তৈরি হয়ে গেলে সব বদলে যাবে। কোতলপুরে কোতল ছাড়া আর কী করতেন? ৭২ হাজার কোটি টাকার শিল্প হবে। বাঁকুড়া তীর্থভূমি। পরীক্ষার ফল বেরোলেই দেখা যায়, এখানকার পড়ুয়ারা ভাল ফল করেছে। এখানে তাই বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল আছে, পড়ুয়াদের জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড হবে, মাত্র ৪ শতাংশ সূদে। আলু সহায়ক মূল্য দিয়ে আলু কিনি।
আগের বার যাঁরা বিজেপি-কে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের বলব, বিজেপি বলেছিল, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেবো, দিয়েছে? ওরা নির্বাচনের আগে অনেক কথা বলে, আর নির্বাচন শেষ হলে পালিয়ে যায়, আর ডুগডুগি বাজায়। বাংলায় বহিরাগত গুন্ডাদের পাঠিয়েছে।: মমতা
চমকাইতলায় সভা করতে এসেছিলাম। ছোট্ট সার্কিট হাউজে ছিলাম। অজিত পাঁজাকে আটকে দিয়েছিল, বাস ভাঙচুর করেছিল, বাসে গুলি চালাচ্ছিল, সেই অবস্থায় মানুষদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলাম। বিক্রমপুরের ঘটনা আমি ভুলিনি।
আমাদের গদ্দাররা এখন বিজেপি-র ওস্তাদ হয়েছে। তাঁরা কী অত্যাচার করত, মনে রাখবেন। আমাকে পুলিশ ঢুকতে দিচ্ছিল না। এক পা এক পা করে ঢুকেছিলাম। সালাম নামে একজনের বাড়িতে গিয়েছিলাম, বিক্রমপুরের গ্রামে। বিক্রমপুরের সেই অত্যাচার কোনওদিন ভুলব না। গোপীনাথপুরের অত্যাচারের কথা ভুলে যাইনি।