বাঁকুড়া: ভয়াবহ সেই দিনটার কথা মনে পড়লে আজও শরীরে হিমস্রোত বয়ে যায় সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের। বাঁকুড়ার জয়পুর থানা এলাকার বাসিন্দা সন্দীপের স্ত্রী ও কোলের মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল সেদিন। এই ঘটনায় নাম জড়ায় সন্দীপের দাদা ও বৌদির। অভিযুক্ত দাদা প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়কে ২৯ অগস্ট গ্রেফতার করলেও বৌদি অনিতা অধরা ছিলেন। বারবার ঠিকানা বদলেও লাভ হল না। জয়পুর থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
২০১৪ সালে জয়পুর থানার গেলিয়া গ্রামে জোড়া খুনের ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। সন্দীপের স্ত্রী মমতা চট্টোপাধ্যায় ও তাঁদের দেড় বছরের মেয়ে অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, খুন করে বাড়ির মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়েছিল তাদের। সন্দীপ তাঁর দাদা, বৌদির নামে অভিযোগও জানান। তবে অভিযুক্তরা সেই সময় থেকেই পলাতক ছিলেন।
চলতি সপ্তাহে প্রথমে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মথুরাপুর থেকে অনিতার স্বামী প্রদীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপরই তাঁকে জেরা করে স্ত্রীর খোঁজও শুরু হয়। মথুরাপুরেই তদন্তকারীদের একটি দল নজর রাখছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ধরা পড়েন অনিতাও। শুক্রবার ধৃতকে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে জয়পুর থানার পুলিশ।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে প্রদীপ মথুরাপুরে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। স্ত্রী অনিতা বিভিন্ন জায়গায় আয়ার কাজ করতেন। তাঁদের দুই মেয়ে রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, স্বামী কাজ সেরে বাড়ি ফিরলে ট্রেনে চেপে কলকাতায় যেতেন অনিতা। বিভিন্ন নার্সিংহোমে কাজের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে আয়ার কাজও করতেন। এমনও অভিযোগ, পুলিশের নজর এড়াতে মথুরাপুরের বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন তাঁরা। মেয়েদেরও কারও সঙ্গে কথা বলতে দিতেন না বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। এমনকী স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পর মথুরাপুরের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে কাকদ্বীপে চলে যান অনিতা। তবে যে কোনও কারণেই হোক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মথুরাপুরে এসেছিলেন। এরপরই হাতেনাতে ধরা পড়েন।
নিহতের বাবা সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার কৃতজ্ঞের শেষ নেই এই থানার প্রতি। আজ মনে হয় আমি অর্ধেক বিচার পেয়ে গেলাম। আট বছর আগের ঘটনা। তার কিনারা করল জয়পুর থানার পুলিশ। আমি তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। একেবারে একা মানুষ আমি। হতাশায় ভুগছিলাম। এখানকার ওসি যেভাবে কাজ করলেন, ভাবা যায় না। একজন সিভিক আমাকে গ্রেফতারির খবরটা দেন। এরপরই আমি ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। যিনি ধরা পড়েছেন, তিনি আমার বৌদি। এরকম কাজ করতে পারে কোনওদিন ভাবিইনি। আমার ১ বছর ৪ মাসের ছোট্ট মেয়ে, আমার স্ত্রীকে নৃশংসভাবে শেষ করে দিয়েছে। আমি একজন বাবা, একজন স্বামী হিসাবে বলব একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই এর যথার্থ শাস্তি। আদালতের উপরও আমার ভরসা আছে।”