বাঁকুড়া: কালীপুজোর দিন দেবী দুর্গা পুজিত হয় বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের (Bankura Bishnupur) রক্ষিত পরিবারে। প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে এই রীতি। কার্তিক অমাবস্যায় রাজ্যুজুড়ে যখন কালীর আরাধনা চলছে, সেখানে বিষ্ণুপুরে দেখা যায় অন্য ছবি। দেবীর অকাল বোধনের মতোই রক্ষিত বাড়ির এই পুজো চলে চারদিন ধরে। সোমবার পুজোর সপ্তমী।
৩০০ বছরের পুরনো এই পুজোকে ঘিরে অনেক কিছুই কথিত আছে। শোনা যায়, তিন শতক আগে রক্ষিত পরিবার ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবারে দু’ বেলা দু’মুঠো ভাত জোটানো ছিল কষ্টকর> পুরুলিয়ার বিভিন্ন জঙ্গলে রেশমগুটি সংগ্রহ করে তা অন্যত্র বিক্রি করতেন রক্ষিত পরিবারের কোনও এক পূর্বপুরুষ। কথিত আছে, এরকমই রেশমগুটি তোলার সময় একদিন ক্লান্ত হয়ে রক্ষিত পরিবারের ওই সদস্য গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন। সেই সময় দেবী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন।
স্বপ্নের মধ্যেই ওই ব্যক্তি নির্দেশ পান কালীপুজোর রাতে দেবী দুর্গার পুজো করার। এরপরই তিনি বাড়ি ফিরে এসে শিব দুর্গার মূর্তি গড়ে শুরু করেন দুর্গাপুজো। সেই পুজোই চলে আসছে। পরবর্তীকালে রক্ষিত পরিবার ভেঙে যায়। নতুন আরও একটি পুজো শুরু হয়। তবে পুজো আলাদা হলেও প্রাচীন পুজোর ধারা কিন্তু আজও অব্যাহত। রক্ষিত পরিবারে দেবীর প্রতিমাও ভিন্ন ধরনের। এখানে দেবী দশভূজা নন । দেবীর হাত দু’টি। পাশে রয়েছে দেবাদিদেব মহাদেব।
তাঁদের পাশে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীর অবস্থান। রক্ষিত পরিবারের দাবী দেবী এখানে ঘরের মেয়ে। তাই সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী শেষে বিজয়ার দিন এখানে দেবী প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয় না। ভাইফোঁটা পার করে এখানে দেবী প্রতিমার বিসর্জন হয়। কার্তিকের শেষবেলায় দেবী দুর্গার এই আরাধনায় মেতে উঠতে শুধু গ্রামের মানুষই নন, যোগ দেন দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষও।