সু জ য় পা ল
বাপ মা হারা ১১ বছরের কিশোর। বগটুই গ্রামেই (Bagtui Massacre) তার দিদার বাড়িতে থাকে। ছোট্ট একটা কাঁচা ঘরেই দিন গুজরান হয় তাদের। মৃত নাজিমা বিবির বাড়ির পাশেই তাদের বাড়ি। অভিশপ্ত সেই রাতে বগটুই গ্রামে যখন বোমাবাজি শুরু হয়েছিল, তখন ঘাবড়ে গিয়েছিলেন কিশোরের দিদা। কাঁচা ঘরে থাকার বিপদ বুঝে প্রতিবেশী নাজিমা বিবির বাড়িতে সপরিবারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মৃত নাজিমা বিবিদের বাড়িতে লোহার দরজা। পাকা ছাদ। দিদা ভেবেছিলেন হয়ত নিরাপদ হবে। সেই ভেবেই আশ্রয় নিয়েছিল তারা। কিন্তু পরক্ষণেই কী হল? TV9 বাংলাকে সেই রাতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানাল ১১ বছরের কিশোর। সেই রাতের আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ছোট্ট ছেলেটাকে।
প্রথমেই ছাদে বিকট শব্দ। ওই পাকা বাড়ির ছাদের উপর এসে পড়ে তিনটি বোমা। তার কিছু সময় পরে ঘরে ছোড়া হয় পেট্রল বোমা। সঙ্গে সঙ্গে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। চোখের সামনে নাজিমাকে আগুনে পুড়তে দেখে তারা। কিন্তু নিরুপায়। কিছু সময় পর আগুন কিছুটা নিভলে গেট ভেঙে পালায়। জ্বলন্ত পায়ে ট্রেন ধরে নলহাটি পালায়। পরদিন ভর্তি হয় হাসপাতালে। ১১ বছরের ওই ছোট্ট ছেলেটার দুই পা পুড়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার সাত দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে সে। ছোট্ট এই কিশোরের কথায়, “আমার সঙ্গে যা হয়েছে, আল্লাহ যেন ওদের সঙ্গেও তাই করেন।” ওই বৃদ্ধার ২০ বছর বয়সি মেয়েরও পা পুড়ে গিয়েছে। ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতা জানালেন তিনিও। তাঁর অভিযোগ, ভাদু শেখের লোকেরাই সব করেছে। ১১ বছরের কিশোর এবং ২০ বছরের ওই যুবতি, উভয়েরই বক্তব্য, পুলিশ সেই রাতে ছিল না।
ওই অভিশপ্ত রাতে দুষ্কৃতীদের আক্রোশ থেকে রেহাই পায়নি ১১ বছরের এই কিশোরও। সেই ভয়ঙ্কর রাতের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে সে জানায়, “আমিও পুড়ে যাচ্ছিলাম। আমার পা দুটোতে লেগেছিল। আমি নানির কাছে চলে গিয়েছিলাম। সেই জন্য আমার কিছু হয়নি। নাজিমা নানিদের বাড়ি গিয়েছিলাম। প্রথমে বোম মেরেছিল, তারপর আগুন। ওরা গেটেই ছিল, কেউ ভিতর থেকে বেরোতে পারেনি। আগুন ধরানোর পর ওরা চলে গিয়েছিল। আমরা পাশের ঘরে ছিলাম। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলাম। কেউ আসেনি। তারপর আমরা তালা ভেঙে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।”
আরও পড়ুন : Bagtui Massacre: ‘দুই গোষ্ঠীর লড়াই, এর দায় তৃণমূলের কেন হবে?’ বগটুইকাণ্ডে প্রশ্ন ফিরহাদের