বীরভূম: তিন মাসের বাচ্চাটাকে খাইয়ে ঘরে রেখে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন বছর ষোলোর মেয়েটা। গ্রামেই পড়েছিল পরীক্ষাকেন্দ্র। গ্রামের রাস্তার ধারে একটা পাঁচিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়েই গলার কাছে কিছু একটা এসে পড়ে। মুহূর্তে জ্বলে যায় শরীরটা। গলা বেয়ে যেখান দিয়ে তরলটা বয়, সেই এলাকাগুলো জ্বলতে থাকে। পরীক্ষার্থীর আর্ত চিৎকারে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ততক্ষণে ঝলসে গিয়েছে তরুণীর গলা-কাঁধ। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ওপর অ্যাসিড হামলার অভিযোগ। ভয়ঙ্কর ঘটনার বীরভূমের হীরাপুরে। আক্রান্ত ছাত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে।
হীরা বানু খাতুন নামে আক্রান্ত ছাত্রীর বাড়ি গোপালপুর গ্রামে। গ্রামেই তাঁর পরীক্ষাকেন্দ্র। নলহাটি হাই স্কুল ফর গার্লস পরীক্ষার সিট পড়েছে। অনান্য দিনের মতো, ঘরে বাবা-মায়ের কাছে তিন মাসের বাচ্চাকে রেখে পরীক্ষা দিয়ে আসছিল সে। বাকি পরীক্ষাগুলোও এইভাবেই দিয়েছে। এদিন পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছেই চলে এসেছিল। পাঁচিলের পিছন থেকে তখনই অ্যাসিড হামলা।
ঘটনার নেপথ্যে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হীরার স্বামী রাজেশ শেখই নাকি তাকে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছে। অন্তত এমনই অভিযোগ তুলছে পরিবার। কিন্তু কেন? এই উত্তরটাই এখন হাতড়ে বেরাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। কী এমন হল, কেন এতটা রাগ, যে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে অ্যাসিড ছুড়তে হল এক পরীক্ষার্থীর ওপর? নিন্দনীয় ঘটনায় সরব গোটা গ্রাম।
হীরার বাবা-মায়ের বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। তাঁরা প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতেই নেই। হীরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মূলত তাঁর গলার ডান দিক ও কাঁধে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে নলহাটি থানার পুলিশ।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “মেয়েটা পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল। হঠাৎ মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকে সে। আমরা সবাই ঘাবড়ে যাই। একটা ছেলে তখন দেখলাম দৌড়ে পালিয়ে গেল। তারপর তো শুনি এই ঘটনা।” আপাতত রাজেশ শেখকে আট করছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চাইছিল হীরা। আর তা চাইছিলেন স্বামী। সেই কারণেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথেই স্ত্রীর গায়ে অ্যাসিড ছুড়েছে সে।