বোলপুর: টানা ছাত্র আন্দোলনে তপ্ত রবিভূমি। এরই মধ্যে বিস্ফোরক উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিশ্বভারতী আক্ষরিক অর্থে দুর্নীতির আখড়া। অভিযোগ করলেন খোদ উপাচার্য। তিনি বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে একটি চিঠি আপলোড করেছেন। সেই চিঠির ছত্রে ছত্রে রয়েছে বিস্ফোরক সব তথ্য। গত কয়েকবছরে প্রাক্তন উপাচার্যদের আমলে বিশ্বভারতীতে একাধিক দুর্নীতি হয়েছে, দাবি করেছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। চিঠিতে বিশ্বভারতীর একাধিক কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, এখানে ভুয়ো রিসার্চ স্কলার গবেষণার নামে টাকা নিয়েছে। অতিরিক্ত গ্রেড পে দেওয়া হয়েছে। গা জোয়ারি করে নিয়োগ আটকে রাখা হয়েছে। এমনকি উপাচার্যের সামনে কর্মীদের মারাও হয়েছে, হয়নি পুলিশি অভিযোগ। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন কীভাবে প্রাক্তন অধিকর্তারা বিভিন্ন ইস্যুতে সিবিআই জেরার সম্মুখীন হয়েছেন।
বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে তিনি আপলোড করেছেন তিন পাতার একটি চিঠি। সেই চিঠির প্রথম স্তবকেই তিনি বোমা ফাটিয়েছেন। উপাচার্যের অভিযোগ, বিশ্বভারতী দুর্নীতির আখড়া। সাম্প্রতিক অতীতে এক ছাত্রকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যিনি গবেষণার নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখানকার প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর একটি অভিযোগে সিবিআই-এর রার সম্মুখীন হয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে দোষী প্রমাণিতও হয়েছেন। রবিভূমি থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে নোবেল পুরস্কারও। এতেই বোঝা যাচ্ছে আইন শৃঙ্খলার অবনতির কথা! এমনকি প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর ইসি মিটিংয়েও অংশ নেননি।
খোলা চিঠির ছত্রে ছত্রে দুর্নীতির কথা তুলে ধরেছেন বর্তমান উপাচার্য। কর্ম সমিতি বসন্ত উৎসব করতে দেয়নি বলেও দাবি তার। বিশ্বভারতীতে অনেক নিয়োগই নিয়ম মেনে হয়নি। তেমনি ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ।
উত্তাল পরিস্থিতিতে রবিভূমের কলঙ্কের কথা ফাঁস করছেন উপাচার্য। বিশ্বভারতীর এই অশান্ত পরিবেশে উপাচার্যের এই ধরনের চিঠি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে চিঠিতে উপাচার্য এটাও উল্লেখ করেছেন, তাঁর এই চিঠি লেখার একটাই উদ্দেশ। দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে সরব হতেই তাঁর এহেন পদক্ষেপ।
গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্র আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্বভারতী। বর্তমান ইস্যু হল পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি। সেই দাবিতে উত্তাল বিশ্বভারতী। স্থগিত রাখা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও। ছাত্রদের এহেন লাগাতার আন্দোলন অত্যন্ত অনভিপ্রেত বলেও মন্তব্য করেছেন উপাচার্য। তাঁর কথায়, ছাত্র আন্দোলনে বিঘ্নিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ।
উপাচার্য উল্লেখ করেছেন এবছর বসন্ত উৎসবের সমস্ত আয়োজনই হয়ে গিয়েছিল বিশ্বভারতীতে। কিন্তু এক অনাকাঙ্খিত কারণে তা বাতিল করা হয়। বিশ্বভারতীর কর্মীরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন।
চিঠির শেষে মোটা অক্ষরে উপাচার্য লিখেছেন, “আমি এখানে একটা সত্যের উপস্থাপনা করলাম। যদি কেউ অমত হন, তাহলে আমাকে প্রকাশ্যেই চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। অবশ্যই প্রমাণ-সহ।”
আরও পড়ুন: আরজি করে হবু ডাক্তারদের মারামারি! কারও মাথা ফাটল, কেউ আওড়ালেন ‘আত্মরক্ষা’র তত্ত্ব