RG Kar Medical College: আরজি করে হবু ডাক্তারদের মারামারি! কারও মাথা ফাটল, কেউ আওড়ালেন ‘আত্মরক্ষা’র তত্ত্ব

Junior Doctor: শহরের প্রথম সারির মেডিকেল কলেজে এই ছবি ভয় ধরাচ্ছে সাধারণ মানুষের।

RG Kar Medical College: আরজি করে হবু ডাক্তারদের মারামারি! কারও মাথা ফাটল, কেউ আওড়ালেন 'আত্মরক্ষা'র তত্ত্ব
জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে মারামারি আরজি কর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 22, 2022 | 7:40 AM

কলকাতা: আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের মারধরের অভিযোগ উঠল। মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি তাঁরা। চিকিৎসক প্রহৃত হওয়ার কথা শোনা গেলেই কাঠগড়ায় তোলা হয় রোগীর আত্মীয়দের। তবে এবার তেমন কোনও অভিযোগ নয়। উল্টে হবু ডাক্তাররা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শহরের প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালের এমন ঘটনায় হতবাক চিকিৎসক সমাজ। অবাক হচ্ছেন সাধারণ মানুষও। মার-পাল্টা মারে সহপাঠীকে রক্তাক্ত করার অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে, তাঁরা ভবিষ্যতে মানুষের প্রতি কতটা সহমর্মী চিকিৎসক হতে পারবেন, সে প্রশ্নও তুলেছে বিভিন্ন মহল।

সোমবার দুপুরে আরজি কর হাসপাতালের অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ে পরীক্ষা ছিল। অভিযোগ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই একদল চিকিৎসক ছাত্র তাঁদের‌ই সহপাঠীদের উপরে চড়াও হন। চারজন জুনিয়র চিকিৎসক গুরুতর জখম হয়েছেন। হাসপাতালের এক জুনিয়র চিকিৎসক মহুয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সবেমাত্র পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়েছি। আমরা এত ঝামেলার মধ্যে থাকিও না। এত মারধর করা হয়েছে আমাদের। একেবারে গুন্ডাগিরি যাকে বলে।” মহুয়ার অভিযোগের আঙুল আরজি করেরই একদল জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে।

হবু ডাক্তারদের মধ্যে মারামারির অভিযোগ। তা নিয়েই সরগরম আরজি কর হাসপাতাল। তবে এই গোলমালের সূত্রপাত সোমবার নয়। পাঁচ মাসে আগে থেকে এই ঝামেলার সলতে পাকানো শুরু হয় বলেই অভিযোগ। পাঁচ মাস আগে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন হয় আরজি করে। সেই আন্দোলনকে ঘিরে জুনিয়র ডাক্তাররা দু’দলে ভাগ হয়ে যান বলে অভিযোগ। একদল ছিল অধ্যক্ষের পক্ষে, অপরদল বিপক্ষে।

অভিযোগ, শুক্রবার আন্দোলনের অন্যতম মুখ এক ইন্টার্ন মৈনাক রায়কে মারধর করেন অধ্যক্ষের পক্ষে থাকা ডাক্তারি পড়ুয়ারা। আন্দোলনকারী এক হবু চিকিৎসক জানান, “আমাদেরই এক ইন্টার্ন অন ডিউটি ছিলেন। উনি কিছু সময়ের জন্য কলেজের বাইরে চা খেতে যান। সে সময় তাঁকে আমাদেরই কলেজের কিছু ছাত্র যাঁরা ওই ইন্টার্নেরও জুনিয়র তাঁরাই ঘেরাও করে মারধর করেন।” প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে পোস্টার লাগানো হয়। এদিকে ওই রাতেই ফের হামলার অভিযোগ ওঠে।

অভিষেক রায় নামে আক্রান্ত এক জুনিয়র চিকিৎসক জানান, “শনিবার রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একদল গিয়ে সিনিয়র অর্থো-পিজিডিকে ঘেরাও করেন। তাঁকে মারধরের হুমকি দেন। অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন। বলা হয়েছে, ডিউটিতে ঢুকতে দেওয়া হবে। হস্টেলের বাইরে গেলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেওয়া হবে।”

যদিও অন্যপক্ষের এক জুনিয়র চিকিৎসক সম্পদ শিকদারের বক্তব্য, তাঁদের উপর হামলা হয়েছে। সম্পদের কথায়, “জেনেশুনে আমাদের মারধর করা হয়েছে। যাঁরা আন্দোলন করেছিলেন তাঁরাই এ কাজ করেছেন। মৈনাক রায়, চন্দ্রমৌলি ঝাঁ, আকাশদীপ মান্না সকলেই ছিলেন।” মারধরের কথা শিকারও করেন আন্দোলনকারীরা। সেক্ষেত্রে তাঁরা ‘আত্মরক্ষা’র তত্ত্ব খাঁড়া করেন। এক আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকের বক্তব্য, “আমরা প্রথমে মার খাওয়া শুরু করি। মার খেতে খেতে মানুষ তো আত্মরক্ষার চেষ্টা করবেই। এটুকু তো হবেই।”

এদিকে এই ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায়। সুদীপ্তবাবু বলেন, “চন্দ্রমৌলি ঝাঁ একজন ইন্টার্ন ডাক্তার। সে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমি জানতে গিয়েছিলাম প্রকৃত কী ঘটেছে। যেখানে মারধর করা হয় সেখানেও গিয়েছিলাম। দু’জন ডাক্তারবাবুর গাড়িও ভেঙে দিয়েছে।” শুধু জুনিয়র ডাক্তাররাই নন, কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে। শনিবারের গোলমালের আঁচ সোমবারও কীভাবে ছড়াল? হাসপাতালের পরিস্থিতি কেন বারবার এমন হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

সোমবারের মারধরে গুরুতর জখম সুমন হাজরার মাস ছয়েক আগে বাইক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গিয়েছিল। ভাঙা পা আবার সহপাঠীরা ভেঙে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।‌ সংবেদনশীল চিকিৎসকেরা বলছেন, পা নয়, আসলে চিকিৎসক সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা‌ই ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: Konnagar Municipality: তৃণমূল কাউন্সিলরের জামিন করিয়েছেন বিজেপির আইনজীবী, দল ধরাল শোকজ নোটিস