বীরভূম: দেউচা পাচামিতে (Deocha Pachami) ফের অশান্তি। পাচামি এলাকায় তৃণমূলের (TMC) মিছিলকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনা। লাঠিসোটা নিয়ে মিছিলের ওপর চড়াও হলেন স্থানীয় মহিলারা। নিগৃহিত হলেন সাংবাদিকরাও। আদিবাসীদের একাংশের দাবি, তাঁরা কোনও কয়লাখনি চান না। আর তা হতেও দেবেন না। মিছিলে বাধা দিতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কার্যত ‘খণ্ডযুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েন আদিবাসী মহিলারা। তাঁঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আদিবাসী মহিলাদের উপর হামলার ঘটনায় আগেই প্রতিবাদ করেছিল বাম শিবির। এ বার, কয়লাখনির বিরুদ্ধে সুর তুলল পদ্ম শিবিরও।
বামের পাশে প্রতিবাদে বিজেপি
বিজেপির অভিযোগ, বৃহস্পতিবার, আদিবাসী মহিলারা তৃণমূলের মিছিলে বাধা দেন। সেইসময়, পুলিশ তাঁদের উপর পাল্টা মারধর করে বলে অভিযোগ। সেই মারধরের ছবি রেকর্ড করা হলে মোবাইল থেকে তা মুছে দেওয়া হয়। এমনকী,আক্রান্ত ৮ জন আদিবাসী মহিলাকে সঠিক চিকিৎসার ফরমানও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
ঘটনায়, বিজেপি জেলা সভাপতির মন্তব্য, “জোর করে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। লাঠি চালিয়েছে। যাঁরা এতদিন কয়লাখনি চান না বলে আওয়াজ তুলতেন তাঁরাই আজ তৃণমূলে যোগ দিয়ে কয়লাখনি চাই বলে চিৎকার করছেন। আদিবাসীরা স্পষ্টই বলেছেন, তাঁরা কয়লাখনি চান না। তারপরেও জোর করে খনির কাজ হচ্ছে। প্রতিবাদ করায় মহিলাদের বাড়ি থেকে তুলে এনে মারধর করা হয়েছে। মোবাইলে ছবি তুলতে গেলে সেসব মুছে ফেলা হয়েছে। চিকিৎসাটুকুও জোটেনি আহতদের।”
তবে, দেউচা পাচামিতে আদিবাসীদের উপর ‘হামলার’ ঘটনায় আদিবাসীদের পক্ষে আগেই রাজ্য সরকারের বিরোধিতায় নেমেছে বাম শিবির। নিজের ফেসবুক পোস্টে এ নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আদিবাসীদের উপর হামলার ঘটনাকে তিনি ‘তৃণমূলী সন্ত্রাস’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কেন পাচামিতে বারবার বিক্ষোভ?
প্রসঙ্গত, পাচামিতে বিক্ষোভ ও অশান্তি কোনও নতুন ঘটনা নয়। বৃহস্পতিবার, দেউচা পাচামিতে প্রচারে বেরতেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যান আদিবাসী মহিলারা। ওদিন, দেউচা পাচামি এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে একটি মিছিলের আয়োজন করে তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিলকারীদের দাবি, এলাকার শান্তিপূর্ণ মানুষেরা এই মিছিলের আহ্বান করেছেন। মিছিলে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সকলেই। ছিলেন সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারী আদিবাসী নেতা সুনীল সরেন। কিন্তু সেই মিছিল এগোতেই শুরু হয় অশান্তি।
দেউচা পাচামি দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় মিছিল শুরুর কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎই তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হন আদিবাসী মহিলারা। লাঠিসোটা নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মারধর করা হয় সাংবাদিকদেরও। ছিঁড়ে ফেলা হয় পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি। আক্রমণকারী মহিলাদের দাবি, তাঁরা এই এলাকায় কোনও কয়লাখনি চান না। সে কারণে এখানে কোনও মিছিলও হতে দেবেন না। ভিটে ও জমি ছাড়তে নারাজ মহিলাদের কথায়, “কিচ্ছু চাই না আমরা। কীসের দেউচা পাচামি? কীসের মিছিল? আমরা কিচ্ছু চাই না। যেমন আছি তেমন থাকব। নিজেদের খাব। এখানেই থাকব।”
এদিকে এই বিক্ষোভ অশান্তি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুনীল সরেন দুষেছেন এক সংগঠনকে। তাঁর অভিযোগ, তারাই প্রভাবিত করছে আদিবাসীদের। তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে সেফ ডেমোক্রেসি ফোরাম নামে সংগঠন দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় সভা করে। তার পরেই এলাকা উত্তপ্ত। সে কারণেই এলাকার শান্তিপূর্ণ মানুষেরা এই মিছিলের আহ্বান জানিয়েছে। মানুষ যাতে এই বিরোধীদের চক্রান্ত এবং বহিরাগতদের চক্রান্তে পা না দেয় সেটা বোঝাতেই এই মিছিল”।
অনুব্রতর বিতর্কিত মন্তব্য
অন্যদিকে, পাচামির এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিতর্কিত মন্তব্য বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। তাঁর কথায়, “সাত- আটজন মহিলাকে মদ খাইয়ে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মিছিল সাকসেসফুল হয়েছে।” দেউচা পাচামির দেওয়ানগঞ্জে তৃণমূলের মিছিলের উপর হামলার ঘটনায় অনুব্রত মণ্ডলের এমন মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এর আগেও পাচামি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে বিরোধ দেখা গিয়েছে। আদিবাসীদের পুনর্বাসন কী করে হবে, তা নিয়ে সংশয় ছিলই গ্রামবাসীদের মধ্যে। রাজ্য সরকারের ঘোষিত প্যাকেজের বিরুদ্ধে আগেও মাঝি হারানের নেতৃত্বে আদিবাসীদের জমায়েত লক্ষ্য করা গিয়েছে। যদিও, রাজ্যের তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে, আদিবাসীদের পাশে সবসময় রয়েছে সরকার। যথাযথ পুনর্বাসন দিয়েই জমি অধিগ্রহণ করা হবে।