বোলপুর : তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের বিশাল অঙ্কের সম্পত্তির খোঁজ ইতিমধ্যেই পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে সায়গলের। সেই সম্পত্তির বহর দেখে চোখ ছানাবড়া হওয়ার জোগাড় হয়েছিল রাজ্যবাসীর। কিছুটা একইভাবে চক্ষু চড়কগাছে হবে অনুব্রতর গাড়ির চালকের ফুলে ফেঁপে ওঠা সম্পত্তি দেখলেও। সায়গলের তুলনায় অত পাহাড় প্রমাণ না হলেও, অনুব্রত বাবুর গাড়ির চালক আনারুল শেখও কিন্তু কোটিপতি। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে টিভি নাইন বাংলার অন্তর্তদন্তে।
বোলপুর শহর থেকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দূরে খিরুলি গ্রামের বাসিন্দা আনারুল শেখ। গাড়ির চালক হওয়ার সুবাদে অনুব্রত বাবু যেখানে যেখানে যেতেন, অনেক জায়গাতেই যাওয়া-আসা ছিল আনারুলের। একাধিক সূত্র মারফত খবর, সায়গল হোসেনের মতোই অনুব্রতর গাড়ির চালককেও তাঁর প্রায় ছায়াসঙ্গী বলা হলে, খুব একটা ভুল বলা হবে না।
জানা গিয়েছে, আগে আনারুল শেখ গ্রামের বাড়ি থেকে যাতায়াত করলেও, গত বেশ কয়েক বছর হল তিনি গুরুপল্লীতে একটি বাড়ি করেছেন। বোলপুরের জামবনি বাসস্ট্যান্ডের পিছনের দিকেই গুরুপল্লী। এই মুহূর্তে শহরের অন্যতম অভিজাত এলাকা এটি। সেই গুরুপল্লীতেই সাজানো গোছানো ঝা চকচকে দোতলা বাড়ি আনারুল শেখের। প্রাসাদোপম না হলেও আকারে বা বহরে খুব ছোটখাটোও নয় এই বাড়ি।
খোঁজখবর নিতে টিভি নাইন বাংলা পৌঁছে গিয়েছিল আনারুলের বাড়িতে। কিন্তু সেখানে পৌঁছতে জানা গেল, আনারুল নেই। তাঁকে ফোনে ধরা হলে আনারুল জানান, তিনি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন নমাজ পড়তে। তবে বাড়িতে দেখা মিলল আনারুলের ভাই জানে আলম এবং তাঁর মা জাহানারা বিবির। জানে আলম জানালেন, তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আর আনারুল বছর দশেক হল, অনুব্রত মণ্ডলের গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করছেন।
অনুব্রত মণ্ডলের গাড়ি চালক এই আনারুলের স্ত্রী সালমা বেগম। তাঁর নামে এই বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের মার্চ মাসেই বোলপুর শহরের ঠিক বাইরে ইলামবাজার – বোলপুর রোডের উপর এক বিঘারও বেশি জমি কেনা হয়েছে। মহিদাপুর মৌজায়। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ওই জমির বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে এক কোটি টাকা।
এছাড়া গুরুপল্লী এলাকায় যে দোতলা বাড়িটি রয়েছে আনারুল শেখের, সেটি তৈরি হয়েছে সাড়ে তিন কাঠা জমির উপরে। খোঁজখবর নেওয়ার সময় এমনই জানালেন তাঁ ভাই জানে আলম। সেই জমির দামও নেহাত কম নয়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বোলপুর শহরের উপর ওই রকম অভিজাত জায়গায় কাঠা প্রতি জমির দাম ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
আর এখানেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে। দুই ভাই। একজন গাড়ির চালক। অন্য ভাই পেশায় রাজমিস্ত্রি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আনারুলের স্ত্রীর নামে এতটা জমি কেনা হল। সেই টাকার উৎস কী? যদিও সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি আনারুলের ভাই। তিনি জানেনও না সালমার নামে ওখানে জমি কেনা হয়েছে। তিনি উল্টে জানালেন, গ্রামে বেশ কিছু জমি কেনা হয়েছে। অর্থাৎ আনারুলের আরও বেশ কিছু সম্পত্তি যে রয়েছে, এমন ইঙ্গিতও মিলল তাঁর ভাই-এর কথাতে। আর সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে, গাড়ির চালক হিসেবে তিনি অনুব্রত মণ্ডলের কাছ থেকে কত বেতন পেতেন? জমি, বাড়ি, গ্রামের বাড়িতে চাষের জমি, এত কিছু তিনি ১০ বছরের চাকরি জীবনে করে ফেললেন? এর পিছনেও কি রয়েছে কোনও রহস্য?