বীরভূম : তৃণমূল নেতা ভাদু শেখকে ভর সন্ধ্যায় খুন। রাস্তার মাঝেই বোমা মেরে খুন করে পালায় দুষ্কৃতীরা। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গেল রামপুরহাটের ছবি। জ্বালিয়ে দেওয়া হল একের পর এক বাড়ি। সকালে উদ্ধার হল দলা পাকানো লাশ। যেন বাস্তব নয়, বলি সিনেমার চিত্রনাট্য। কিন্তু আদতে এতটাই মর্মান্তিক ছবি দেখল রাজ্যবাসী। তবে কি খুনের বদলা খুন? কেন একই দলের মধ্যে বিরোধিতা এতটা চরমে? প্রশ্ন উঠছে অনেকগুলো। তবে একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, আসলে সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। যে জেলাকে মানুষ চেনে রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের জন্য, সেই জেলার কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বীজ। আর তার জেরেই বারবার রক্তের দাগ লাগছে এই জেলায়। অবৈধ বালি খাদানই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ বলেই মনে করা হয়। শোনা যাচ্ছে এই ধরনের কোনও অবৈধ ব্যবসা ভাদুকে খুনের অন্যতম কারণ।
বলা হয়, বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জলও খেতে পারে, কিন্তু বীরভূম জেলায় অনুব্রত মণ্ডলকে চটিয়ে কখনও তৃণমূল করা যায় না। যেখানে কেষ্ট মণ্ডল মঞ্চে দাঁড়িয়ে বোমা ফেলে দেওয়ার কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করেন না, সেখানে একই দলের মধ্যেও রয়েছে অনেক বিরোধিতা। কান পাতলেই শোনা যায়, অনুব্রতর ভাইদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই মিল নেই। তাঁর অনুগামীদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে অনেক। সামনে সমর্থন করলেও অনেক নেতাই মনে মনে কেষ্ট মণ্ডলকে মানেন না।
আর বীরভূম জেলায় এই সব দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে বালি খাদান। বালি খাদানের ভাগ বাঁটোয়ারা অর্থাৎ রোজগারের উৎস নিয়েই দ্বন্দ্ব বলে জানা যায়। বেআইনি বালি খাদান থেকে আসা টাকা কার হাতে যাবে, তা নিয়েই নাকি শত্রুতা বাড়ছে। পুরসভা কার দখলে যাবে, পঞ্চায়েত কার হাতে থাকবে, সব হিসেবের পিছনেই নাকি থাকে বালি খাদানের ভূমিকা। কখনও লাভপুর, কখনও নানুর, কখনও সাঁইথিয়া, বারবার দলের অন্দরের শত্রুতা সামনে এসেছে। তৃণমূলই মারছে তৃণমূলকে।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরে বিধানসভা নির্বাচনের পর তাঁদের মধ্যে অনেকেরই ঘর ওয়াপসি হয়। এরপর ঠোকাঠুকি আরও বাড়ে বলেই সূত্রের খবর। আর এ সবের মধ্যে কার্যত নিষ্ক্রিয় পুলিশ। জেলায় ক্যাম্প থাকলেও পুলিশকে তেমন কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায় না। রিপোর্ট বলছে, তারই ফল এই রামপুরহাট-হত্যাকান্ড।
আরও পড়ুন : Bagtui Massacre: কয়েক ঘণ্টা আগেই বগটুই পৌঁছেছিল নবদম্পতি, চেনাই গেল না সাজিদ-মর্জিনার ‘লাশ’