কোচবিহার : একাধিকবার সূচি পরিবর্তনের পর অবশেষে গতকাল দু’দিনের সফরে বঙ্গে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (Union Home Minister) অমিত শাহ (Amit Shah)। এই দু’দিনের সফরে রয়েছে কোচবিহারের তিনবিঘা। ভারত-বাংলাদেশের মিত্রতার একটি নিদর্শন হল এই তিনবিঘা। সেখানে বিএসএফ (BSF) আধিকারিকদের এর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ছিট মহল হস্তান্তরের পর এই প্রথমবার তিন বিঘায় গিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি সেখানকার মানুষের সমস্যার কথা শোনার কথাও তাঁর।
ইতিহাসে তিনবিঘা করিডর
ভারত-বাংলাদেশের কাছে এই তিনবিঘা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত বণ্টন নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। ২০১৫ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হয়। এরপর সেই চুক্তি মোতাবেক বেরুবাড়ি পায় ভারত। তার বিনিময়ে ১৯৯২ সালে ৯৯ বছরের জন্য বাংলাদেশকে তিনবিঘা ইজারা দেয় ভারত। সেখানে করিডর তৈরির নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ৬০০ ফুট ও ৩০০ ফুটের এই করিডর নির্মাণ ঘিরে অনেক বিতর্ক দানা বেঁধেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, এই করিডর ব্যবহার করে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান চলে। পুলিশ ও এই এলাকার মানুষের সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষও বাঁধে এই নিয়ে। সেই সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েকজনেরও।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তিনবিঘার মানুষের কী দাবি?
তিনবিঘা করিডর দিয়ে বাংলাদেশের যানবাহন যাতায়াত করে। এখানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত খোলা থাকে। সেই কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকায় আন্তর্জাতিক চোরাচালানের রমরমার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ও গরুপাচার। সেই সূত্রেই এলাকায় নজরদারি ও বিধিনিষেধ বাড়ানোর দাবিও উঠেছে বহুবার। সেখানকার বাসিন্দারা চোরাচালানের অভিযোগে সরব হয়েছেন বহুবার। উল্লেখ্য়,ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের পর বেরুবাড়ি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু এই এলাকার বাসিন্দাদের জমি রয়ে গিয়েছে কাঁটা তারের ওই পারে। সেখানে চাষ করতে হলে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। নিজেদের জমি, কিন্তু নির্দ্বিধায় তাঁরা চাষ করতে পারেন না। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, “ওখানে চাষ করতে গেলে বিএসএফ জওয়ানের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেখানে থাকা বিএসএফ জওয়ানের মর্জি মতো চলতে গিয়ে সেখানকার জমি, আবাস ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা।” আম জনতার দাবি, কৃষি নিয়ে তাঁদের এই সমস্য়া দেখা হোক। তাঁদের আরও দাবি এই তিনবিঘা করিডর দিয়েই বিভিন্ন অবৈধ চোরাচালান চলে। তাই ছিটমহল বণ্টন তো হয়ে গিয়েছে এবার তিনবিঘা করিডর বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অমিত শাহের তিনবিঘা সফরের উদ্দেশ্য
তিনি এদিন বিএসএফ এর আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। গরু পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্যই তাঁর এই বৈঠক বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। এদিকে রাজনৈতিক মহলের মতে, অমিত শাহের তিনবিঘা সফরের পিছনে রয়েছে ভোটের অঙ্কও। গত লোকসভা ভোটে কোচবিহার সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় ভাল ফল করেছিল বিজেপি। তবে ২১ এর বিধানসভা ভোটে নিজেদের প্রত্যাশিত ফলাফল ধরে রাখতে ব্যার্থ হয় বিজেপি। বিজেপিকে পর্যদুস্ত করে সেই এলাকায় ভাল ফল করে তৃণমূল। তবে এর পিছনে স্থানীয় বিজেপি নেতারা অবশ্য অনুপ্রবেশের সমস্যাবৃদ্ধিকেই দায়ী করেছেন। সেই কারণেই বিধানসভা ভোটের পর প্রথম পশ্চিমবঙ্গে এসে সফরসূচিতে রয়েছে তিনবিঘা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই এলাকার সাধারণ মানুষের সমস্যা ও দাবি শোনার পাশাপাশি নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অঙ্ক একবার ঝালিয়ে নিতেই অমিত শাহের এই তিনবিঘা সফর।