কোচবিহার: ফের বিতর্কে কোচবিহারের বিধায়ক উদয়ন গুহ (Udayan Guha)। এ বার বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে কটাক্ষ হেনে পোস্ট করলেন তৃণমূল নেতা। তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতী রাভা রায়ের (Malati Rava Roy) বিরুদ্ধে বিদ্রুপ ভরা পোস্ট উদয়নের। কেন্দ্রে, সেই উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবি। আগেও পৃথক রাজ্যের দাবি করেছিলেন উত্তরবঙ্গের একাধিক বিজেপি বিধায়ক। সেই তালিকায় ছিলেন মালতীও। সদ্যই কোচবিহারের দিনহাটায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুরসভা দখল করেছে তৃণমূল। এরপর, সরাসরি বিজেপি বিধায়ককে নিশানা করে তোপ দাগলেন উদয়ন।
ফেসবুক পোস্টে উদয়ন লিখেছেন, “তোমরা দেখো গো আসিয়া, মালতী দেবী আলাদা রাজ্য দাবি করেন নাচিয়া নাচিয়া!” আর উদয়নের এই পোস্ট ঘিরেই তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। বিভিন্ন সময়েই বিতর্কিত মন্তব্য করে শিরোনামে থাকেন উদয়ন। এ বার সরাসরি মহিলা বিধায়ককে এভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে আক্রমণ করাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে। কোনও বিধায়ক এভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্য কোনও বিধায়ককে কটাক্ষ করতে পারেন কি না তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সামনেই বাংলা ভাগের দাবি জানিয়েছেন কোচবিহারের তুফানগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মালতী রাভা রায়। বুধবার রাজবংশী বীর সেনাপতি চিলা রায়ের জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত হয়ে আবার সেই বাংলা ভাগের দাবি উস্কে দেন মালতী।
‘দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস্ অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজবংশী নেতা অনন্ত মহারাজ আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে গিয়ে মালতি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ নিয়ে পৃথক রাজ্য ঘোষণার দাবি তো আমাদের রয়েছেই। এরই সঙ্গে আমাদের দাবি, বীর চিলা রায়ের কাহিনি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন চিলা সম্পর্কে কিছুই জানে না। ওঁদের জানাতে হবে যে, চিলা রায় শুধু কোচবিহার নয়, গোটা ভারতবর্ষের গর্ব।’’
উল্লেখ্য, বুধবারের ওই অনুষ্ঠানে, মালতী আর নিশীথের আগেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ‘নারায়ণী সেনা’য় অনন্ত মহারাজের অনুগামী যুবকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরেই মালতীর বাংলা ভাগের দাবি তোলায় বিষয়টি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
বস্তুত, বিধানসভা নির্বাচনের পর পরেই উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য ঘোষণা করা হোক এমন দাবি করেছিলেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। একে একে সেই সুরে সুর মিলিয়েছিলেন বিজেপি নেতা রথীন বসু, শিখা চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক নেতা। তখন অবশ্য রাজ্য বিভাজনের প্রস্তাব এক কথায় নাকচ করে দেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। দিলীপ ঘোষেরা জানিয়ে দেন, এ প্রস্তাব একান্তই বার্লার নিজস্ব। দলের এতে কোনও সায় নেই। কিন্তু, তার পরেও বার্লা একাধিক বার বলেছেন, স্থানীয় মানুষের দাবি মেনে উত্তরবঙ্গ বিভাজনের প্রয়োজন রয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিতর্কের আবহ তৈরি হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন উদয়ন। তা নিয়ে তুঙ্গে ছিল শাসক বিরোধী তরজা। দলের অন্দরেও উদয়নের মন্তব্যের জেরে কার্যত শাসক শিবির দ্বিখণ্ডিত। উদয়ন গোষ্ঠী যেমন রয়েছে, তেমন উদয়ন বিরোধী গোষ্ঠীও রয়েছে। সম্প্রতি দিনহাটা পুরসভাও কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের দখলের ঘটনায় উদয়নের নাম জড়িয়েছিল। ফের এই পোস্ট করে বিতর্কে জড়ালেন উদয়ন।