কলকাতা: দু’দিন বাদেই দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে করোনার গণটিকাকরণ প্রক্রিয়া। ১২ তারিখেই পুণে থেকে রাজ্যে এসে পৌঁছেছে ৬.৮৯ লাখ করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ়। বাগবাজারের সেন্ট্রাল ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার স্টোর্সের রেফ্রিজারেটরে ৫৭টি বাক্সে রাখা ছিল সেই ভ্যাকসিন। সেখান থেকেই একে একে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের জন্য পৌঁছে গেল করোনার ভ্যাকসিন।
গতকাল মধ্যরাতে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ হাজার করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ় (COVID-19 Vaccine Dose) এসে পৌঁছয়। সকাল থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়। সূত্র অনুযায়ী, কেবল দার্জিলিং জেলাতেই মোট ১৭৩৪৫ জন করোনার টিকা পাবেন। জেলার বাকি অংশেও কড়া পুলিসি পাহারায় টিকা পাঠানোর কাজ শুরু করে হাসপাতাল।
কড়া পুলিশি পাহারায় কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালেও পৌঁছয় করোনা ভ্যাকসিন। ১০টি শিশি সম্বলিত কোভিশিল্ডের একটি প্যাকেট এবং ৫৫৬টি ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ বর্ধমান জেলা হাসপাতাল থেকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের অধ্যক্ষ নবারুণ গুপ্ত বলেন, “অবশেষে আমরা কোভিড ভ্যাকসিন পেলাম। প্রথম পর্যায়ে মোট ২৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। আপাতত ভ্যাকসিনগুলিকে হাসপাতালের পিপি ইউনিটে রাখা হয়েছে। শনিবার থেকে টিকাকরণের কাজ শুরু হবে। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের আউটডোরের দ্বিতলে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য আলাদা ইউনিটও তৈরি করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন: লালার বাড়িতে সিবিআইয়ের নোটিস, সময় বেঁধে দিল এক মাস
অন্যদিকে, কোচবিহার জেলাতেও এসে পৌঁছয় করোনার ভ্যাকসিন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডেপুটি সিএমওএইচ-৩-র দফতরের জেলা ভ্যাকসিন স্টোরে এসে পৌঁছয় এই ভ্যাকসিন। এই বিষয়ে কোচবিহার জেলার নোডাল অফিসার দিলীপ কান্তি দে বলেন, “জেলায় মোট ১৮ হাজার ৫০০টি ভ্যাকসিনের ডোজ এসে পৌঁছেছে। সেগুলি কঠোর নিরাপত্তায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা সেখানে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। মহকুমা হাসপাতালগুলি ছাড়াও নাটাবাড়ি, গোসাঁনীমারী, সিতাই ও শীতলকুচির মতো নয়টি কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য।” জেলা স্বাস্থ্যদফতর সূত্রে জানানো হয়, শুক্রবার থেকে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রগুলিতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া হবে। শনিবার থেকে শুরু হবে টিকাকরণ প্রক্রিয়া। প্রায় ১৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির করোনাযোদ্ধাদের নামের তালিকা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে।
আলিপুরদুয়ারে আজ বিকেল ৪ টায় এসে পৌঁছয় করোনাব ভ্যাকসিন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্মীয়মাণ দফতরের স্টোররুমে প্রায় ১২,৫০০ টি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ডোজ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬০টি ভ্যাকসিনের ডোজ যাবে হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনিতে। বাকি ভ্যাকসিন জেলার স্বাস্থ্য কর্মীদের দেওয়া হবে। ১৬ জানুয়ারি থেকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল, কামাখ্যাগুড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফালাকাটা গ্রামীন হাসপাতাল ও যশোডাঙ্গা ব্লক প্রাথমিক হাসপাতাল- জেলার চারটি সেন্টারে সকাল ন’টা থেকে এই টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশ চন্দ্র বেরা। এদিন ভ্যাকসিন এসে পৌঁছনোর আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশ চন্দ্র বেরা।
আরও পড়ুন: দুমড়ে মুচড়ে গেল গাড়ি, ভয়াবহ দুর্ঘটনায় জখম টেলি অভিনেত্রী
রাজ্যের বাকি জেলার মতোই সুন্দরবন এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা সংক্রমণ। বৃহস্পতিবার কড়া পুলিসি পাহারার মধ্যে দিয়েই করোনা ভ্যাকসিন এসে পৌঁছয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে l একইসঙ্গে দুর্গাপুর নগর নিগমেও পৌঁছয় করোনা ভ্যাকসিন। দুর্গাপুরের সিধু কানহু স্টেডিয়ামে হবে এই টিকাদান কর্মসূচি। দুই হাজার জনের তালিকা তৈরি করা হলেও ১৬ জানুয়ারি প্রথম ধাপে মোট ১০০জনকে দেওয়া হবে এই ভ্যাকসিন। এমনটাই জানিয়েছেন দুর্গাপুরের মহানাগরিক দিলীপ অগস্তি।
পুরুলিয়াতেও ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে করোনা ভ্যাকসিন। এই বিষয়ে জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত বলেন, “১৬ তারিখ থেকে জেলার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এরমধ্যে রয়েছে পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ এবং রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। এছাড়াও টিকা দেওয়া হবে ঝালদা, বাঁশগড়, হুড়া এবং কোটশিলা গ্রামীণ হাসপাতাল- এই চারটি ব্লক স্তরের হাসপাতাল থেকেও ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। টিকা নেবার পর সকলকেই আধঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সুষ্ঠভাবে টিকাকরণ প্রক্রিয়া পরিচালনের জন্য একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে, এর নম্বর হল ৯৬৩৫৭৭৮৮২৯। টিকা সংক্রান্ত যেকোনও তথ্য এই নম্বরে ফোন করলেই জানা যাবে।”
আরও পড়ুন: ‘বিজেপি-যোগ আছে, এমন নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ’! শিশিরের পদে বসেই তৎপর সৌমেন