তপন: গর্ভপাতের ওষুধ খেয়ে মৃত্যু হল তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা মহিলার। মৃতার নাম বিলকিস বিবি (৩১)। বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার হজরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জমিন কড়ইতে। বুধবার বালুরঘাট থানার পুলিশ মৃতদেহটি ময়নতদন্তে পাঠানোর পাশাপাশি পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছে। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ওই এলাকায় এনিয়ে বিশেষ সচেতনামূলক শিবির করতে চলেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিলকিস বিবির দুই সন্তান রয়েছে। স্বামী বাবু সরকার। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। মাস দেড়েক আগে গোয়াতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। স্ত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়ে সপ্তাহ খানেক আগে বাড়ি আসেন। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। ছোটো ছেলের বয়স প্রায় এক বছর। এই অবস্থায় মাস তিনেক আগে ফের তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। দিন কয়েক আগে বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেন। এরপরই বিলকিস বিবি স্বামীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় গ্রামীণ চিকিৎসককে দেখিয়ে গর্ভপাত করাবেন। সেই মতো দিন সপ্তাহ খানেক আগে স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখিয়ে গর্ভপাতের ওষুধ খান। অভিযোগ, গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ার পর থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিন দু’য়েক আগে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তাঁকে ভর্তি করা হয় গঙ্গারামপুর মহাকুমা হাসপাতালে। যদিও লোকলজ্জার ভয়ে হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি সম্পূর্ণ লুকিয়ে যান বিলকিস বিবি। খানিকটা সুস্থ হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি আসার পর বিকেলে খাওয়া দাওয়া পর ফের একবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রাতে অবস্থা বেগতিক দেখে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। সেখানে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মৃতের দেওর জয়দুর সরকার বলেন, “আমি একটু দূরে থাকি। এসব বিষয়ে কিছু জানি না। হঠাৎ কাল রাতে ফোন করে বলে বৌদি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ব্যবস্থা করে দিই। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলেই চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে। পরে জানতে পারি গর্ভপাত করানোর ওষুধ খাওয়ার বিষয়টি। তবে পুরো বিষয়টি আমার জানা নেই।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা দিপালী বর্মণ বলেন, “প্রায় প্রতিদিনই বিলকিসের সঙ্গে তার দেখা হতো। পঞ্চায়েত সদস্যর পাশাপাশি আমি একজন স্বাস্থ্য কর্মী। অতএব আমাকে এইটা বলতেই পারত। আমাকে বিষয়টি বললে পরেই এই সমস্যা হত না।”
অন্যদিকে এ বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুদীপ দাস বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে ওই এলাকায় এনিয়ে সচেতনতামূলক শিবির করা হবে। আগামী দিনে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে।”