উত্তর দিনাজপুর: যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ঘরে ফিরল ঘরের ছেলে। সন্তানদের বুকে আঁকড়ে কেঁদে ভাসালেন বাড়ির বড়রা। উত্তর দিনাজপুর জেলার তিন পড়ুয়া শনিবার বিকেলেই বাড়িতে ফিরেছেন। ইসলামপুরের পাভেল দাসের পাশাপাশি এদিনই বাড়িতে ফেরেন চোপড়ার সোহেল আখতার, শাহিদ আখতারও। বাড়ির চৌকাঠে ছেলেরা পা রাখতেই গত কয়েকদিনের চাপা উদ্বেগ বেরিয়ে এল কান্না হয়ে। কারও আবার ছেলেকে দেখে শরীর যেন থর থর করে কাঁপছে। ভয়-আনন্দ মিলেমিশে একাকার। চোপড়ার কাঁচাকালী এলাকার বাসিন্দা মতিবুল রহমানের দুই ছেলে সোহেল আখতার ও শাহিদ আখতার ইউক্রেনে গিয়েছিল ডাক্তারি পড়তে। তাঁরা বোগোমোলেটস ন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া। ২০১৮ সালে সোহেল ইউক্রেন যান। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে যান শাহিদ। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে থাকছিলেন তাঁরা।
অন্যদিকে ইসলামপুরের পাভেল দাস ইউক্রেনের টার্নোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পাভেল নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে জানান, “খুব চিন্তায় ছিলাম। আমার বাড়ির লোকও খুবই চিন্তায় ছিল। খুব ভয়ের একটা পরিস্থিতি ছিল। বাড়িতে ফিরতে পেরে শান্তি লাগছে। আমি টার্নোপিলে থাকি। সেখান থেকে পোল্যান্ডের সীমান্তে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে পার হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দু’দিন থাকলেও যেতে দেওয়া হয়নি। তারপর হাঙ্গেরি সীমান্ত পার করে দেশে ফিরি। শুক্রবার দিল্লিতে নামি।”
পাভেল জানান, টার্নোপিল থেকে বাসের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু পোল্যান্ডে ঢোকার আগে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটতে হয়। কিন্তু সেই হাঁটা কোনও কাজে লাগেনি বলে হতাশা বাড়ে তাঁদের মধ্যে। পাভেলের কথায়, “এরপর আমরা নিজেদের মতো ক্যাব, বাস করে হাঙ্গেরি বর্ডার পার করি। তারপর ভারতের দূতাবাস থেকে সবরকম সাহায্য পাই।” পাভেলের মা জানান, “দিল্লিতে ছেলে পৌঁছেছে শুনেই শান্তি পাই। শুধু আমার ছেলে নয়, সব পড়ুয়া যেন তাদের মায়ের কোলে ফিরে যেতে পারে, যেমন আমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছি সেটাই চাই।”
অন্যদিকে চোপড়ার সোহেল আখতার বলেন, “এত কিছু পার করে বাড়ি ফিরলাম। শান্তি লাগছে। ১০ তারিখ থেকে এসব চলছিল। ২৪ তারিখের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। দিনরাত শুধু বোমাবাজির শব্দ শুনছিলাম। বেঁচে থাকব কি না সেটাও জানা ছিল না। বাইরে বেরোতে পারতাম না। আমরা হস্টেলে ছিলাম কিছুদিন। তারপর দূতাবাস থেকে নির্দেশিকা পেয়ে হস্টেল থেকে ৪-৫ কিলোমিটার হেঁটে রেলওয়ে স্টেশনে যাই। লাভিভে যাই ৯ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে। ট্রেনে পা রাখার জায়গা ছিল না। এ কথা বলে বোঝাতে পারব না।” একই স্বস্তির স্বর শোনা গেল শাহিদের গলাতেও।
আরও পড়ুন: Madhyamik 2022: সোমবার থেকে শুরু মাধ্যমিক, সাংবাদিক সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা পর্ষদ সভাপতির
আরও পড়ুন: Moynaguri: মানুষ জিতিয়েছেন, নিজে হাতে লাড্ডু বানিয়ে ওয়ার্ডবাসীকে খাওয়ালেন নির্দল কাউন্সিলর
আরও পড়ুন: Madhyamik 2022: দুয়ারে প্রশাসন! এক ফোনেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বাড়ির সামনে পৌঁছে যাবে গাড়ি