শিলিগুড়ি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সফরের চারদিন আগেই শিলিগুড়িতে বৈঠক বিজেপির (BJP)। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ ও বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিত্ দাসের তৃণমূলে যোগদানের পর এ বার উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের রুটম্যাপ তৈরিতে বসল পদ্ম নেতৃত্ব। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গেই সর্বাধিক বেশি আসন পেয়েছে বিজেপি। যদিও, বুধবারের বৈঠকে ৩১ জন বিধায়কের মধ্যে ৭ জন ছিলেন অনুপস্থিত। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা ও আলিপুরদুয়ার সাংসদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা। এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক সংগঠন অমিতাভ চক্রবর্তী, উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শ্যামচাঁদ ঘোষ প্রমুখ।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগেই কেন এই বৈঠকের আয়োজন? বিজেপির (BJP) দাবি, ক্ষমতায় আসতে না পারায় বহু ক্ষেত্রেই রাজ্য়ের অসহযোগিতায় এলাকায় নানা প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে বাধা পাচ্ছেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়কেরা। নির্বাচনে জয়লাভের পরেও তাঁদের ঘিরে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল তা পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতার প্রলোভনে বিধায়কদের এক অংশ রাজ্যের শাসকদলের দিকে ঝুঁকতে পারে বলে আশঙ্কা গেরুয়া শিবিরের। ফলে উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করলেও বিপদের সিদুঁরে মেঘ কাটছে না। ইতিমধ্য়েই গঙ্গারামপুর-সহ একাধিক এলাকায় ঘর ভরিয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গকে পৃথক করার দাবি তুলে বেশ খানিকটা ‘ব্যাকফুটে’ গেরুয়া শিবির বলেই মনে করছেন দলের অনেকেই। পাশাপাশি, দল না বদলালেও ‘বেসুর’ বাজতে শুরু করেছেন একাধিক বিধায়ক। হাতছাড়া হয়েছে পঞ্চায়েতও। গেরুয়া শিবিরের কর্মীস্তরেও ভাঙন অব্যাহত। ফলে, বিধায়কদের মনোভাব বুঝতেই মূলত এদিন বৈঠকের আয়োজন করে পদ্ম শিবির।
যদিও, কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায় এদিন বৈঠক শেষে বলেন, “শাসকদল কাজ করতে না দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। জেলাশাসকরা কোনওরকম সহযোগিতা করছেন না। ফলে অনেকেই অসন্তুষ্ট। তবে আমরা বিজেপিতেই রয়েছি। বিজেপিতেই থাকব। এই দল ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার চিন্তা করি না। দলবদলের কোনও প্রশ্ন নেই। ” অন্য়দিকে, বিধায়ক মনোজ টিজ্ঞা বলেন, “তৃণমূলের অত্যাচার ও সন্ত্রাস রুখতেই আজ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সকলের সঙ্গেই আলোচনা করা হল। যাঁরা দল বদল করেছেন তাঁরা বাধ্য হয়ে দলবদল করেছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে আর কেউ দলত্যাগ করবেন না।”
কিন্তু, বুধবারের বৈঠকেও যে বিধায়কেরা অনুপস্থিত ছিলেন তাঁদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাত্পর্যপূর্ণভাবে অনুপস্থিত ৭ বিধায়কই নির্বাচন আবহ থেকেই বিভিন্ন কারণ শিরোনামে এসেছেন। মালদার গোপাল চন্দ্র সাহা, রঘুনাথপুরের বিবেকানন্দ বাউরি, কুমারগ্রামের মনোজ ওরাও, বালুরঘাটের অশোক লাহিড়ী-সহ অনুপস্থিত ছিলেন গঙ্গারামপুরের সত্যেন্দ্রনাথ রায়, হবিবপুরের জুয়েল মুর্মু, এবং সোনামুখীর দিবাকর ঘরামি। এঁদের মধ্যে অশোক লাহিড়ী ও সত্যেন্দ্রনাথ রায় আগেই জানিয়েছিলেন তাঁরা আসতে পারবেন না। কিন্তু বাকিরা কেন অনুপস্থিত ছিলেন তার সার্বিক কোনও কারণ দর্শাতে পারেনি পদ্ম শিবির।
উল্লেখ্য়, বিধানসভা নির্বাচনের পর ইতিমধ্যেই মালদা জেলা-পরিষদ তৃণমূলের হস্তগত হয়েছে। অব্যাহত রয়েছে শাসক শিবিরে যোগদান প্রক্রিয়া।একুশের নির্বাচনে ভাল ফল করেছে তৃণমূল। মালদা ও মুর্শিদাবাদের সিংহভাগ আসনই গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। শুধুমাত্র, শাসক শিবিরের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেই যে মানুষের প্রত্যাশার জবাব পাওয়া যাবে না, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন বিজেপি নেতারা। অন্যদিকে সামনেই নির্বাচনের ডঙ্কা। উপ ও পুর নির্বাচনের মধ্যে কোনটা আগে হবে তা নিয়ে দড়ি টানাটানি চললেও নির্বাচন যে হবে তা স্পষ্ট। ২০২৪-এ রয়েছে লোকসভা নির্বাচনও। সেদিক থেকে রাজ্যে একক বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপি প্রতিষ্ঠা পেলেও বিপদ মুক্তি যে ঘটেনি তা একপ্রকার স্বীকার করেছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ।
প্রথমে ৭৭ থেকে ৭৫। তারপর এই ঘর ওয়াপসির ধাক্কায় পদ্ম বিধায়কদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭২-এ। আর এতে বেজায় চটেছে বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijayvargiya) সরাসরি অভিযোগ এনেছেন রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের অপব্যবহার করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বিধায়কদের বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হচ্ছে। আর সেই মানসিক চাপের মধ্যে পড়েই বিজেপির টিকিটে জিতেও তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন তিন বিধায়ক।
উল্লেখ্য, বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষও বাঁকুড়া শহরের ডাকাবুকো ব্যবসায়ী। রেশন দোকান রয়েছে। মদের ব্যবসাও রয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, সেই ব্যবসা বাঁচানোর জন্যই তন্ময় তৃণমূলে ফিরেছেন। অন্য়দিকে, বিজেপি-তে বিশ্বজিতের না-থাকা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। গত বিধানসভা অধিবেশনের শেষ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখা গিয়েছিল বাগদার বিধায়ককে। খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো বলেছিলেন, ‘কীরে কিছু ভাবলি?’ তার পর থেকেই জল্পনা দানা বাঁধে, তবে কি এ বার ঘরে ফিরবেন বিশ্বজিত্? কিন্তু, নির্বাচনের আগে দলত্য়াগ করেননি মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ বিশ্বজিত্। মুকুল রায় তৃণমূলে ফেরার পর থেকেই রীতিমতো ‘বেসুর’ বাজতে শুরু করেন তিনি। বিজেপির অন্দরের খবর, স্থানীয় রাজনীতিতে বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বিশ্বজিতের সম্পর্ক ভাল নয়। ফলে আজ না হোক তিনি যে দলত্যাগ করবেন তা কিছুটা হলেও আন্দাজ করেছিল পদ্ম শিবির। ফের এই ভাঙনের সম্মুখীন হওয়ার আগেই তাই দ্রুত পদক্ষেপ গেরুয়া শিবিরের। আরও পড়ুন: বন্ধ সরকারি স্কুলে পরীক্ষা! TV9-এর খবরের জেরে নতিস্বীকার স্কুল কর্তৃপক্ষের