দার্জিলিং: ‘ভারত জোড়ো যাত্রায়’ (Bharat Jodo Yatra) অংশ নেওয়ার জন্য এবার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুংকে (Bimal Gurung) আমন্ত্রণ জানাল কংগ্রেস। সোমবার দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল দেখা করে গোর্খা নেতা বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে সেখানে আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে। সেই সঙ্গে আগামী ২৩ জানুয়ারি ‘ভারত জোড়ো যাত্রায়’ পা মেলানোর জন্য গুরুংকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বলে সূত্রের খবর। যদিও ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় বিমল গুরুং যোগ দেবেন কি না, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। সোমবার কংগ্রেস জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ওই বৈঠকের বিষয়ে মঙ্গলবার বিমল গুরুং-এর সঙ্গে TV9 বাংলা যোগাযোগ করলে গোর্খা নেতা জানান, আজ তিনি বিজনবাড়িতে রয়েছেন। ‘ভারত জোড়ো যাত্রায়’ যোগ দেবেন কি না, সেই বিষয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে, কংগ্রেসের তরফে আমন্ত্রণ মেলার খবর প্রকাশ্যে আসতেই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে পাহাড়ে। গুরুং কি তবে কংগ্রেসে ঝুঁকছেন, ইতিউতি উঁকি মারছে সেই প্রশ্নও।
প্রসঙ্গত, পাহাড়ের রাজনীতিতে একটি বড় ফ্যাক্টর হলেন বিমল গুরুং। এককালে বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখার পর, সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্তরাল কাটিয়ে এসে কলকাতায় বসে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন গুরুং। বলেছিলেন, তৃণমূল সরকারের উপর তাঁর আস্থা রয়েছে। কিন্তু জোড়াফুলের সঙ্গে সেই রাজনৈতিক সম্পর্কও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলগা হয়েছে গুরুংয়ের। তৃণমূলের সঙ্গে গুরুংয়ের দূরত্ব বাড়ার সেই জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছে বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গে গুরুংয়ের একান্ত আলাপ। আপাতভাবে এটিকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হলেও, রাজনৈতিক মহলের একাংশের পর্যবেক্ষণ, এই গোপন বৈঠক পাহাড়ের রাজনীতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই খুব একটা ভাল যাচ্ছে না বলেই সূত্রের খবর। অতীতে এককালে ভোটে অলিখিতভাবে মমতার দলের জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন গুরুং। কিন্তু তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দূরত্ব। অনিত থাপার সঙ্গে তৃণমূলের নৈকট্য নিয়েও একটি চোরা স্রোত চলছিল পাহাড়ের রাজনীতিতে।
বিশেষ করে সম্প্রতি বিনয় তামাংও যেভাবে তৃণমূলের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন, সেই জায়গায় পাহাড়ের রাজনীতির পাল্লা কাদের দিকে ভারী থাকতে চলেছে তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে পাহাড়ের ক্ষমতা রয়েছে এখন অনিত থাপার হাতে। এমন অবস্থায় গুরুং শিবিরকে কাছে টানতেই কি ভারত জোড়ো যাত্রায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছে কংগ্রেস? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে।
যদিও এই নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যারা দেশের ঐক্যবদ্ধতার স্বার্থে এই লড়াই লড়তে চায়, তাদের সবাইকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে তৃণমূলকেও কি আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে কংগ্রেস? এই প্রসঙ্গে অধীরবাবু বক্তব্য, এই রাজ্যের ক্ষেত্রে তৃণমূলকে চিঠি দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ, তারা আসবে না। তাই তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়নি। দিল্লিতে যখন ভারত জোড়ো যাত্রা হয়, তখন রাহুল গান্ধী সমস্ত সংসদীয় দলকে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূল তাতে সাড়া দেয়নি।