শিলিগুড়ি: ছেলেটার মা নেই। পাড়ার লোকের চোখে ছেলেটার ‘মাথাখারাপ’। হাত-পাও নড়াচড়া করতে পারত না ঠিকঠাক। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটাকে শেষে খুন (Murder) করে নিজেও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা (Suicide) করলেন বাবা। ঘটনাটি শিলিগুড়ির ভারত নগর এলাকার। শুক্রবার সকালে পুলিশ গিয়ে ছেলে ও বাবার মৃতদেহ উদ্ধার করে। জানা গিয়েছে, মৃতরা হলেন সুব্রত রায় (৫২) ও তাঁর ছেলে সুভাষ রায় (২২)।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সুভাষ ছোট থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। ঠিক করে কথা বলা তো দূর, ভাল করে নড়াচড়াও করতে পারত না। এদিকে, সুব্রতবাবুর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। মা-মরা ছেলেকে নিয়েই একাই থাকতেন তিনি। কিন্তু কতদিন! বয়সের ভারে ছেলের দায়িত্ব নিয়ে রীতিমতো ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন সুব্রতবাবু।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সেভাবে বাবা-ছেলের সাড়াশব্দ পাননি এলাকাবাসী। শুক্রবার সকালেও কোনও সাড়াশব্দ না দেখে সকলের সন্দেহ হয়। বাড়িতে গিয়ে দেখেন ঘরের সমস্ত দরজা-জানলা বন্ধ। বারবার দরজায় ধাক্কা দিয়েও যখন কেউ এসে দরজা খোলে না তখনই সকলের সন্দেহ হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। ভরতনগর থানার পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। দেখা যায়, ঘরের মধ্যেই পড়ে রয়েছে সুভাষের গলাকাটা দেহটা পড়ে রয়েছে একপাশে! রক্তে ভেসে গিয়েছে মেঝে। ওই ঘরেই সিলিঙ থেকে ঝুলতে দেখায় যায় সুব্রতবাবুর দেহ।
সুব্রতবাবুর এক প্রতিবেশীর কথায়, “ছেলের যে বয়সে বাবাকে দেখার কথা, তখন সে কিছুই করতে পারে না! বুড়ো বাবা আর কদ্দিন সামলাবে! সুব্রতদা খুব দুঃখ করতেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর যোগাযোগও অনেক কমিয়ে দিয়েছিলেন। খালি বলতেন, ‘আমি গেলে ছেলেটাকে কে দেখবে!’ জানি না, বৃহস্পতিবার রাতে কী এমন হল! যে ছেলেকে এইভাবে গলা কেটে খুন করলেন! বছরের শেষ দিনে এমন একটা ঘটনা!”
ভরতনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, সুভাষ নামের ওই যুবকের গলায় ধারাল অস্ত্রের কোপ মারা হয়েছে। তবে, অস্ত্রটি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘরে কোনও সুইসাইড নোটও এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যেই মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান মানসিক অবসাদের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে এর পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Prisoner Missing: প্রেসিডেন্সি থেকে বন্দি ‘নিখোঁজ’কাণ্ডের তদন্তে কমিটি গড়ল কারা দফতর