কার্শিয়াঙ: অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। দীর্ঘ চারবছর পর পাহাড়ে হতে চলেছে জিটিএ নির্বাচন তথা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইলেকশন। অন্তত, তেমনটাই ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। নতুন ভোটার তালিকা এলেই পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন (GTA Election) এমনটাই জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
মঙ্গলবার কার্শিয়াঙে প্রশাসনিক বৈঠকের সভামঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “নতুন ভোটার লিস্ট এলেই আমরা জিটিএ নিয়ে এগোব। আমরা পাহাড়ের উন্নয়ন চাই। নির্বাচন হওয়া জরুরি। নিজেদের মধ্যে কোনও বিরোধ নয়। ঝগড়া নয়। একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে উন্নয়নের কাজ করব। জিটিএ নির্বাচন হবে। ওটার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।” এখানেই না থেমে তৃণমূল নেত্রী আরও যোগ করেন, “সবসময় কাজে থাকতে পারবে এমন কাউকে জিটিএ-র দায়িত্ব দেওয়া ভাল।” তারপর, দার্জিলিঙের জেলাশাসককে জিটিএ-র দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও জানান, পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। তবে আইন সংশোধন করেই পাহাড়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে এমনটাই জানান তৃণমূল সুুপ্রিমো। কীভাবে তা নিয়ে কাজ করা যায়, সেপ্রসঙ্গে অনীত থাপা রোশন গিরিদের সঙ্গে আলোচনার কথাও বলেন মমতা। স্পষ্টই বলেন, “তোমরা স্থায়ী সমাধান ভাব। আমি তোমাদের পাশে রয়েছি। আমি জিটিএ নির্বাচন করিয়ে দেব।”
তবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় কার্যত বিরোধের সুর ঘনিয়েছে পদ্ম শিবিরে। বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “এটা কী ধরনের প্রস্তাব? মঞ্চে উঠলাম, একা একা বললাম আর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম! এমনটা হয় নাকি! মনে হল দার্জিলিঙের জেলাশাসককে দায়িত্ব দেওয়া যায়, আর দিয়ে দেওয়া হল! এটার তো একটা আইনি পদ্ধতি আছে। সেটা মাথায় না রেখে যা ইচ্ছে তাই করছেন মুখ্যমন্ত্রী।”
উপনির্বাচনের পরেই অন্যান্য বাকি থাকা নির্বাচনও (পুরভোট) অনুষ্ঠিত হতে পারে এমন ইঙ্গিত মমতা দিয়েছেন। গত অগস্টেই বকেয়া পুরভোট ও জিটিএ-র নির্বাচনের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে দার্জিলিং জেলা সিপিএম। শিলিগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক ও সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, “যে সমস্ত পুরসভার এক বছরের বেশি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, সেখানে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স বসেছে, তা বেআইনি। অবিলম্বে এই সব পুরসভার নির্বাচন জরুরি। কিন্তু, রাজ্য সরকার বিধানসভার উপ নির্বাচন চাইলেও, পুরভোট করাতে আগ্রহী নয়। দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নির্বাচনের দাবিতে পুরসভা-মহকুমা পরিষদ ও পঞ্চায়েত নির্বাচন ও জিটিএ নির্বাচনের দাবিতে মামলা করা হবে হাইকোর্টে।”
২০১১ সালের ১৮ জুলাই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় জিটিএ চুক্তি। ওই বছর ২ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয় জিটিএ বিল। ২০১৪-র ১৪ মার্চ থেকে কার্যকর হয় চুক্তি। পাঁচ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত জিটিএ চুক্তির মেয়াদ আগেই ফুরিয়েছে। বর্তমানে মোর্চা ভেঙে যাওয়ায় জিটিএ-র প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছে। ২০১২ সালে প্রথম জিটিএ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচন বয়কট করে জিএনএলএফ। দশটির বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েই মোর্চার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগে পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় সিপিএম। পৃথকভাবে লড়াই করে তৃণমূল। সর্বোচ্চ আসন পেয়ে জয়ী হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
বর্তমানে, মোর্চা কার্যত ভেঙে গিয়েছে। পৃথক পৃথক দল ঘোষণা করেছেন বিনয় তামাং ও অনীত থাপা। মোর্চার রাশ একা হাতেই ধরেছেন বিমল গুরুঙ। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাহাড়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে জিএনএলএফ। ফলে, পাহাড়ে ঘর গোছাতে হলে জিটিএ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে তৃণমূল। মোর্চার ভাঙন রোধেও তত্পর শাসক শিবির। মঙ্গলবার, অন্তত তেমনই বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। জানিয়েছেন, পাহাড়ে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও বিরোধ নেই। এই পরিস্থিতিতে জিটিএ নির্বাচন হলে ফের ‘কাছাকাছি’ আসতে পারেন অনীত-বিমলরা, পাশাপাশি, পাহাড়ের রাশ যে তৃণমূলের হাতে আসারও একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘অনীত থাপা বন্ধু, ওদের সঙ্গে ঝগড়া নয়’, সভামঞ্চেই সাংসদকে ‘ধমক’ মমতার