তণ্ময় প্রামাণিক: বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছিলেন অক্টোবরে আসতে পারে করোনার (Corona) তৃতীয় ঢেউ। কিন্তু দুর্গাপুজোর ক’টা দিন কলকাতা সহ রাজ্য জুড়ে চিত্রটা দেখা গেল তা ভয়াবহ। বয়স্করা তো বটেই, বাবা-মায়ের হাত ধরে ভিড়ে ঠাসা মণ্ডপে যাচ্ছে শিশুরাও। তাদের অধিকাংশেরই মুখে দেখা যায়নি মাস্ক!
নির্বিকার এই মানুষজন মেতে আছেন উৎসবে। অন্যদিকে নিকু-পিকু সঙ্কট আশঙ্কায় শহর কলকাতা! ছোটদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় আইসিউ বাড়ন্ত। উৎসবের পর কী হবে? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এদিকে রাজ্যে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাও কিন্তু থামেনি।
তবে আমরা কি উৎসবের নামে সন্তানদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি? শিয়রে সর্বনাশ অপেক্ষা করছে? তেমনই অভিযোগ করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। শহরের একাধিক হাসপাতালে ছোটদের জন্য নিকু বা পিকুতে (নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট/পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) কোনও বেড নেই। অনেক অভিভাবক সন্তানের জন্য পিকু-র ব্যবস্থা করতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে।
অষ্টমীর দুপুর থেকে কলকাতার মণ্ডপে মণ্ডপে যখন ভিড় বাড়ছে, তখন ৪ মাসের সন্তানকে নিয়ে দিনভর ঘুরে বেড়ালেন জনৈক বিশ্বজিৎ মণ্ডল। অবশেষে বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে অনেক কষ্টে বেড মিলেছে। একই অবস্থা ইলিয়াস মোহাম্মদের।
এদিকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ, বিসি রায় চাইল্ড হাসপাতাল, এনআরএস, ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ- এর মত রাজ্যের একাধিক নামী হাসপাতালে কিন্তু পিকু বেড প্রায় নেই বললেই চলে। হাসপাতালে শয্যার বাড়ন্ত। অন্যদিকে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালও জানাচ্ছে শিশুদের জন্য বিপুল বেডের ব্যবস্থা তাদেরও নেই।
বিশিষ্ট চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার সাফ জানান, “কোথাও কোনও পিকু-নিকু মিলছে না। শিশুদের কোভিড প্রাথমিক ভাবে কম, সেটা বিজ্ঞান মেনেই। কিন্তু শিশুদের অন্য ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে MIS-C(মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন। মানে, কোনও শিশু করোনা আক্রান্ত কিন্তু বোঝা যায়নি। আক্রান্ত হওয়ার মাস দেড়েক পর থেকে সে পোস্ট কোভিড কারণে অসুস্থ হয়েছে আবার। শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেটাকেই মিসকল বলে। সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত শিশুকে বাঁচাতে জরুরি নিকু-পিকু সাপোর্ট। এদিকে অসুস্থ শিশুর সংখ্যা কিন্তু কিন্তু লাফিয়ে বাড়ছে।”
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমন পোদ্দারও বলেন, “দ্রুত বাড়ছে MIS-C আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। বেড নেই। অবস্থা বেশ গুরুতর। বেহিসাবি উৎসব পালন আমাদের আরও কতটা বিপজ্জনক জায়গা-তে নিয়ে যাবে তা সপ্তাহ দুয়েক পরেই আমরা বুঝতে পারব। ছোটদের জন্য চিন্তা কিন্তু বাড়ছে।” যে অভিভাবকরা বাচ্চাদের সাজিয়ে গুজিয়ে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা শুনছেন তো?
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: বাড়ছে সংক্রমণ! ভিড় এড়াতে নবমীতেই শিয়ালদহ শাখায় বাতিল হল ৭ জোড়া স্পেশাল ট্রেন