পূর্ব মেদিনীপুর: ভগবানপুর থেকে পটাশপুর, কয়েক দিন আগে তাঁরা ভাবতে পারেননি এবার দুর্গাপুজো (Durga Puja) করতে পারবেন। বাড়িঘরে জল ঢুকেছে। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীর পাকা বাড়িতে। কেউ আবার পরিবার নিয়ে ঘর ছেড়েছেন জল নামলে আবার ফিরবেন বলে। এই অবস্থাতেও ভগবানপুর, ভীমেশ্বরী, পটাশপুরের মতো জায়গাগুলিতে পুজো করেছেন বন্যাদুর্গতরা। সেই জল যন্ত্রণায় ভুগছেন এখনও। তাই অষ্টমী, নবমীর দুপুরে ঠাকুর দেখতে এসে হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে তাঁদের কাতর প্রার্থনা, আর যেন এমন দিন দেখতে না হয়। পরের বার যেন খুশিমনে, হুল্লোড়ে মেতেস পুজো করতে পারেন তাঁরা। দুর্গার কাছে কী চাইলেন ভগবানপুর ও পটাশপুরের দুর্গত মানুষরা?
‘জল যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দাও আমাদের। এমন কিছু কর যাতে ভগবানপুর, পটাশপুর এলাকায় আর কখনও বন্যা না হয়।’
মা কি পেলেন শুনতে? প্রার্থনা জানিয়েও দ্বিধা নিয়ে একথা বলছেন যিনি, তিনি হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে আছেন মণ্ডপের সামনে। তাঁর মতোই একই প্রার্থনা আরও অনেকের। গত কয়েকদিনে যে যন্ত্রণায় তাঁরা ভুগেছেন, আর যেন এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে না হয়, জানাচ্ছেন তাঁরা।
এক বন্যাদুর্গতের কথায়, দুর্গা এখন তিলোত্তমা কলকাতার কোটি টাকার মণ্ডপে মণ্ডপে পুজো নিতে ব্যস্ত। তিনি এখন ভাসছেন জন সমুদ্রে, জন প্লাবনে। এলইডি আলোর ঝলকানি, আলোর রোশনাইয়ে যখন মেতেছে কলকাতা, তখন দেড়শো কিলোমিটার দূরে বহু এলাকা এখনও অন্ধকারে ডুবে। ছেলে মেয়েদের নিয়ে বছরে চার দিনের জন্য বাপের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন ঊমা। তার মাঝে ভগবানপুর, পটাশপুরের লক্ষ লক্ষ মানুষ জানালেন তাঁদের জল যন্ত্রণার কথা। বন্যা প্রতিরোধের দাবি নাকি মা-এর কানে গিয়েছে। এমনই বিশ্বাস বন্যা দুর্গতদের।
এবার পুজোর আনন্দ একেবারে মাটি হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে করোনার জেরে উৎসব বন্ধ। আয়উপায়ে কাটছাঁট হয়েছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে যোগ দিয়েছে বন্যা। এখন অবশ্য কয়েকটি জায়গায় পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হয়েছে। তার পরেই দেখা গেল কয়েকটি পুজো প্যান্ডেলে দর্শন সেরে নিচ্ছেন এলাকাবাসীরা। যদিও সেই আনন্দ থেকে এবার বাদ গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর ও পটাশপুরের মানুষজন। কারণ, জল যন্ত্রনা সরিয়ে তার পর মিলছে পুজো দেখার সৌভাগ্য। তার মধ্যেও কোথাও কোমরজল, কোথাও হাঁটুজল ভেঙে দুর্গা মণ্ডপে পৌঁছে গিয়েছেন অনেকে। তাঁদের সকলেরই প্রার্থনা, এই যন্ত্রণা না যেন আর না পোয়াতে হয়। পরের বার যেন হাসিখুশি মনে দুর্গাকে স্বাগত জানাতে পারেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: সপ্তমীর ভিড়ে চুলোয় গেল কোভিড বিধি, ঠাকুর দেখতে শিলিগুড়িতে জনপ্লাবন