কলকাতা : ২০২২ সালের নেতাজি সম্মানে ভূষিত হলেন জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর তরফে রবিবার সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে এই পুরস্কার দেওয়া হল শিনজো আবেকে। কলকাতায় নিযুক্ত জাপানের কনসুল জেনারেল নারামুরা ইউটাকা শিনজোর হয়ে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন আজকে। এলগিন রোডে নেতাজির বাসস্থানেই এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় জাপানের কনসুল জেনারেলের হাতে। ভারতে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাতোশি সুজুকি এদিন দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। গতবছর নেতাজির জন্মবার্ষিকীতে মরণোত্তর নেতাজি সম্মান দেওয়া হয়েছিল তাঁর দীর্ঘদিনের ছায়া সঙ্গী আবিদ হাসান সফরানিকে।
নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর ডিরেক্টর তথা নেতাজির নাতি সুগত বসু এদিন অনুষ্ঠানে শিনজো আবেকে নেতাজির অন্যতম বড় প্রশংসক বলে আখ্যা দেন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে যখন শিনজো আবের ভারত সফরে আসার কথা ছিল, তখন তাঁর সফর সূচিতে ছিল ইম্ফল। যদিও পরবর্তীতে সিএএ বিক্ষোভের জেরে সেই সফর বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই সফর সূচিতে নেতাজির স্মৃতি জড়িত ইম্ফলকে রাখার মাধ্যমেই শিনজো আবে বুঝিয়েছিলেন যে তিনি ভারতের ইতিহাস সম্পর্কেও কতটা অবগত। এবং ভারত-জাপান সম্পর্কে নেতাজির গুরুত্ব কতটা।
প্রসঙ্গত, জাপানের কাছে মণিপুরের রাজধানীর তাৎপর্য অন্য মাত্রার। ১৯৪৪ সালে এখানেই নেতাজির নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে লড়াই করে ব্রিটিশদের হারিয়েছিল জাপানে রয়্যাল আর্মি। পরে অবশ্য ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল উইলিয়াম স্লিমের নেতৃত্বাধীন সেনার প্রতিরোধের সামনে পড়ে পিছিয়ে যেতে হয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ ও জাপানি সেনাকে। যদিও প্রত্যাঘাত করেন নেতাজি। ইম্ফল ও কোহিমার যুদ্ধে জাপানি সেনার প্রায় সাড়ে তিন হাজার সৈনিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। ভারতীয় মূল ভূখণ্ডে সেই যুদ্ধের পরই প্রথমবার উড়েছিল তেরঙ্গা। এছাড়াও নেতাজির জীবনের অনেকটা জুড়ে রয়েছে জাপান। আর জাপানের মনেও নেতাজির জন্য পৃথক একটি স্থান রয়েছে। আর তাই শিনজো আবে উত্তর-পূর্বের এই শহরে যেতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর সফর বাতিল হলেও আবের নেতাজি প্রেম স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছিল।
এদিকে শিনজো আবে এই প্রথম ভারতের থেকে কোনও সম্মান পাচ্ছেন না। এর আগেও কেন্দ্রের তরফে সম্মানিত করা হয়েছিল শিনজো আবেকে। ২০২১ সালে শিনজো আবের নাম রাখা হয়েছিল ভারত সরকারের তরফে পদ্ম সম্মান প্রাপকদের তালিকায়। ২০২১ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল যে শিনজো আবেকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মবিভূষণে ভূষিত করা হবে।