গোঘাট : মাধ্যমিক স্কুল। পড়ুয়ার সংখ্যা দুশোর কাছাকাছি। শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ৬। এর ফলে সব ক্লাসে সবসময় শিক্ষক থাকা সম্ভব নয়। তাই, শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলেন অভিভাবক। এরই মধ্যে নতুন সমস্যায় হুগলির গোঘাটের শুনিয়া ক্ষুদিরাম বিদ্যাভবন। ৬ জনের মধ্যে তিন শিক্ষিকা উৎসশ্রী পোর্টালের (Utsashree Portal) মাধ্যমে বদলির আবেদন জানিয়েছেন। তিন শিক্ষিকার একজন আবার হাইকোর্টের কাছ থেকে বদলির নির্দেশও নিয়ে এসেছেন। তিনজন শিক্ষিকা চলে গেলে স্কুল কীভাবে চলছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রধান শিক্ষক থেকে অভিভাবকরা। তাঁরা চাইছেন দ্রুত নিয়োগ করা হোক স্কুলে।
প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুল ২০১৪ সালে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। তার আগে জুনিয়র হাইস্কুল ছিল। আগে পড়ুয়া সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াইশো। এখন তা কমে দাঁড়িয়ে ১৮৯। স্কুলে তিন শিক্ষক ও তিন শিক্ষিকা ছাড়া একজন শিক্ষাকর্মী রয়েছেন। কিন্তু, গ্রুপ ডি স্টাফ নেই । ছাত্রছাত্রীদেরই ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করতে হয়। এই অবস্থায় ওই তিন শিক্ষিকা উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমের বদলির আবেদন জানিয়েছেন। স্কুলের পরিচালন সমিতি ছাড়পত্র না দেওয়ায় এক শিক্ষিকা হাইকোর্ট থেকে বদলির নির্দেশ নিয়ে এসেছেন।
অভিভাবকদের বক্তব্য, শিক্ষকের অভাবে স্কুলে পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে না। তাই অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের অন্য স্কুলে ভর্তি করছেন। আরও তিন শিক্ষিকা চলে গেলে, অনেক ছাত্রই অন্য স্কুলে চলে যাবে। তাই, তাঁদের আবেদন, প্রত্যন্ত এলাকার এই স্কুলে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করা হোক। উৎসশ্রী পোর্টালেরও মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শিক্ষকরা অন্য জায়গায় চলে গেলে, ওইসব স্কুলে কী হবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
কী এই উৎসশ্রী পোর্টাল?
উৎসশ্রী পোর্টাল খোলা হয় যাতে শিক্ষকরা নিজেদের বাড়ির কাছে শিক্ষকতা করার সুযোগ পান। বদলির জন্য শিক্ষকরা নিজেরাই উৎসশ্রী পোর্টালেই আবেদন করতে পারেন। গতবছরের জুলাইয়ে পোর্টালটির উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। একজন শিক্ষক বর্তমানে যে স্কুলে শিক্ষকতা করেন, সেখানে পাঁচবছর পূর্ণ হলেই বদলির আবেদন করতে পারবেন। মাধ্যমিক স্কুলের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের বাড়ি থেকে দূরত্ব তাঁর বর্তমান কর্মস্থল ২৫ কিমির বেশি হলেই আবেদন করা যাবে। একবার বদলি হলে আগামী পাঁচ বছর আর আবেদন করা যাবে না।
গোঘাট ১ নম্বর তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র পাঁজা বলছেন, সরকার শিক্ষকদের সুবিধার জন্যই এই পোর্টাল খুলেছে। এতে শিক্ষকরা নিজেদের বাড়ির কাছে স্কুলে শিক্ষকতা করা সুযোগ পাবেন। গোঘাটের বিজেপি বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক অবশ্য উৎসশ্রী পোর্টাল চালুর অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তাঁর বক্তব্য, প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলগুলি তুলে দিয়ে মদের দোকান করতে চাইছে রাজ্য সরকার।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, “উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে তিন শিক্ষিকা চলে যাচ্ছেন। সরকারের কাছে আবেদন করব, এই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করা হোক। না হলে স্কুল বন্ধের মতো পরিস্থিতি হতে পারে।”
বদলির আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষিকা সৌমী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমার বাড়ি বারাসতে। এখান থেকে একশো কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব। এখানে ৬ বছরের সন্তানকে নিয়ে একা থাকি। স্বামী অন্য জায়গায় চাকরি করে। সেজন্যই আমি বদলির আবেদন করেছি।”
অনেকে বলছেন, উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলির সুযোগে সবাই শহরের দিকে চলে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষক সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এভাবে চললে স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন : শিক্ষক বদলিতে ঘুষের দাবি, এখানেও বড় ষড়যন্ত্র? সিআইডি তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের