হুগলি: দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ। বন্ধ স্কুল চত্বরে মদের বোতলের ছড়াছড়ি । ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ভাঙা কাচ। স্কুল পরিষ্কার করতে গিয়ে এসব দেখেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা। স্তম্ভিত অভিভাবকরাও।
হুগলির গোঘাটের কাঁটালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমনই অবস্থা।
বৃহস্পতিবার মিড ডে মিলের খাদ্য সামগ্রী বন্টন করতে গিয়েছিলেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। তখনই তাঁরা এসব দেখেন। বছর দুয়েক ধরে বন্ধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাঝেমধ্যেই মিড ডে মিলের চাল ডাল আলু বন্টন করতে আসেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুল বাড়িটিরও প্রায় ভগ্নদশা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই স্কুল চত্বরটি এখন এলাকার দুষ্কৃতীদের আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা নামতেই স্কুল ভবনে বসে মদের আসর। কয়েক মাস আগে এই বিদ্যালয়ে চুরি হয়। মিড ডে মিলের সামগ্রী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের তুলে দিতে এসে চোখে পড়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তারপরই গোঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
ওই এলাকায় পুলিশি নজরদারি জোরদার করার দাবি করেছে। যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার এখনও ছাড়পত্র দেয়নি রাজ্য সরকার। আর বাচ্চাদের স্কুল খোলার আগেই এমন ঘটনায় হতবাক এলাকার মানুষজন।
স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “স্কুল ভবনের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। সন্ধ্যার পর থেকে এখানে দুষ্কৃতীদের আসর বসে। বারবার প্রশাসনকে বলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখানে বাচ্চাদের পড়াশোনার পরিবেশ থাকবে? বাচ্চাদের মনে কী প্রভাব পড়বে?”
৬ নভেম্বর খুলছে স্কুল। কিন্তু, ক্লাস হবে কোথায়? বার্ধ্যকে জরাজীর্ণ স্কুল ভবন। পুরনো স্কুল বিল্ডিং, বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়ছে চাঙর,খসে পড়ছে পলেস্তারা। তাতেও সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকরা সন্ধিহান।
প্রসঙ্গত, একই অবস্থা বর্ধমানের রাজ কলিজিয়েট স্কুলও। সরকারি নির্দেশিকা মেনে আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে স্কুল খুললেও তাদের স্কুল কিভাবে চালু হবে বুঝে উঠতে পারছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জানিয়েও কোন ফল হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে স্কুল বিল্ডিং বাঁচানোর আর্জি নিয়ে পোস্টার লিখে, হাতে মাইক নিয়ে রাস্তায় নামলেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। মঙ্গলবার স্কুল গেটের সামনে রীতিমতো মাইকিং করে, পোস্টার নিয়ে স্কুল বাঁচানোর কাতর আর্জি জানান তাঁরা।
উল্লেখ্য, ১৮১৭ সালের ৬ জানুয়ারি স্থাপিত হয়েছিল বর্ধমানের রাজ কলেজিয়েট স্কুল। দীর্ঘদিনের পুরনো বিল্ডিং। একসময়কার স্বনামধন্য স্কুল।সেই স্কুলের বিল্ডিংয়ের এখন ভগ্নপ্রায় অবস্থা। ২০০৫ সালে এই স্কুলের ছাত্র সংখা ছিল ১,৫০০ এর মত। কিন্তু দিনের পর দিন স্কুল বিল্ডিংয়ের অবস্থা বেহাল হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ছাত্রসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০০ এর মত। কিন্তু কেন এই অবস্থা? স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত মিশ্র জানান, দীর্ঘদিনের পুরনো এই স্কুল বিল্ডিং। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় স্কুল বিল্ডিংয়ের চাঙর ভেঙে পরে। ছাত্ররা আতঙ্কে থাকে। অভিভাবকেরা এখানে ছাত্র ভর্তি করতে দ্বিধাবোধ করেন। আবার যারা ভর্তি হয় তাদের অনেকেই এই স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে। এটা শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও কষ্টের। পুরনো স্কুল ভবনগুলি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকরা।
আরও পড়ুন: Sayantika Banerjee: ‘দলে কাকে নেওয়া হবে তা দিদি ঠিক করবেন…এক ভুল বারবার করব না’