হুগলি: সামনে পুরভোট। বিজেপির একাধিক রাজ্য নেতা প্রচারে আসছেন হুগলিতে। শনিবার চন্দননগর পুরনিগমের ভোট প্রচারে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও গিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, সমস্ত দলীয় কর্মসূচি ছেড়ে বিজেপির প্রাক্তন হুগলি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিকে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের (Trinamool Congress) সাংসদের হাত থেকে সংবর্ধনা নিতে। অভিযোগ, ইদানিং দলের কোনও কর্মসূচিতেই দেখা যাচ্ছে না বিজেপির (BJP) প্রাক্তন হুগলি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুবীর নাগকে। অথচ শনিবার চুঁচুড়ার একটি ক্লাবে তিনি সংবর্ধনা নিতে যান বলে অভিযোগ। সংবর্ধনা দেন তৃণমূলের আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার (MP Aparupa Poddar) ও চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। যদিও এই অভিযোগকে রং চড়িয়ে দেখানো বলেই দাবি সুবীর নাগের। তিনি পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠানে যান। সেখানেই তৃণমূল সাংসদও ছিলেন। তবে একইসঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিমানের সুরও শোনা যায় সুবীর নাগের গলায়। হুগলিতে সংগঠনের জন্য তাঁর অবদানও তুলে ধরেন তিনি।
এদিন সুবীর নাগ বলেন, “এটা আমার পাড়ার ক্লাবের মঞ্চ। উদয় সংঘ ক্লাবের আমি দীর্ঘদিনের সদস্য। এদিন একটি শববাহী গাড়ির উদ্বোধন ছিল। আমাদের আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার ক্লাবকে এই শববাহী গাড়িটি দান করেছেন। তাই তিনি এসেছিলেন। এই ক্লাবের অনেক কিছুতেই আমাদের বিধায়ক যুক্ত থাকেন। তিনি এই পাড়ার ছেলে। দু’জনই ছিলেন। আমাকে সাংসদ সংবর্ধনা দিয়েছেন, আমি সেটা নিতে অস্বীকার করতে পারি না। এটা সৌজন্য। রাজনীতির বিষয়ই না। কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটাকে রাজনীতির রঙে রাঙাতে চাইছে।”
তবে একই সঙ্গে সুবীর নাগ পরিষ্কার জানান, গত আড়াই বছর ধরে দলের কোনও কার্যক্রমে তাঁকে ডাকা হয় না। একসময়ের তিনি একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন বিজেপির। অথচ বর্তমানে তাঁকে পুরোপুরি কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছে। ভোটে হারটা বিজেপির হয়নি বলেই দাবি করেন সুবীর নাগ। তাঁর কথায়, “এটা বিজেপিকে না পছন্দ করা নয়। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা দলের নেতৃত্ব বোঝেনি সেটা তাদের বিষয়। তারা ভুল করলে তার দায় আমি নিতে পারি না। হুগলির বিজেপি কর্মীরা আমাকে যতটা ভরসা করে, এটা অন্য কাউকে করে না।”
অভিমানের সুর আরও খানিক চড়িয়ে সুবীর নাগ জানিয়ে দেন, তিনি বিজেপিতে ছিলেন, বিজেপিতে আছেন। তবে আগামিদিন কী হবে তা রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলবে। সুবীর নাগের দাবি, “বিজেপি আমাকে কোথাও ব্যবহার করছে না। আমি রাজনীতির লোক। লোকের সেবা করব বলেই এসেছি। কিন্তু পার্টির আদর্শ ভূলুন্ঠিত হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। আমার পার্টিতে অর্থের বিনিময়ে টিকিট হবে ভাবাই যায় না। তথাগতদা (তথাগত রায়) অনেক কিছু বলেছেন। আমি কিছু বলতে চাই না। তবে যা হয়েছে ভুল হয়েছে।”
বিজেপি যুব নেতা সুরেশ সাউ বলেন, বিজেপি একমাত্র দল সেখানে স্বাধীনতা আছে, গণতন্ত্র আছে। তার যদি কেউ অপব্যবহার করে থাকে, শাস্তিও দেওয়া হয়। প্রত্যেকেরই ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। তবে সেটা যদি দলের বিপক্ষে হয়, তা উচ্চনেতৃত্ব দেখবে।
অন্যদিকে তৃণমূলের চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, “চুঁচুড়া পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উদয় সংঘ ক্লাবের তরফে কিছু লোককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সুবীর নাগও ছিলেন। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূলও এই সংবর্ধনা দেয়নি। তবে সুবীর নাগ বিজেপির দুঃসময়ের ছেলে। সে যদি মনে করে তৃণমূলে আসবে তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক। ও যদি তৃণমূলে আসে আমরা ওকে নিয়েই চলব। আমাদের কোনও অসুবিধা নেই।”