সিঙ্গুর: সিঙ্গুরে ক্ষোভের আগুন ঘি ঢাললেন শুভেন্দু। শুক্রবার সিঙ্গুরে রতন টাটার শোক সভা মঞ্চ থেকে অবরাও আন্দোলনের ডাক দিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। হয় কৃষি উপযোগী জমি না হয় শিল্প। এই একই দাবিতে নতুন করে আন্দোলনমুখী হচ্ছে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের একাংশ। ইতিমধ্যেই সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের একাংশ তাদের জমি কৃষি উপযোগী করে ফেরত দেওয়ার দাবিতে একটি কমিটি গঠন করেছে। রাজ্য সরকারকে জমির চরিত্র খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। দাবি না মানলে আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অনিচ্ছুক কৃষকদের একাংশ। তাঁদের সঙ্গে দলে ভিড়ছেন ইচ্ছুক কৃষকদের একটা অংশও। তাহলে কী আরজি কর আবহ শেষ হতে না হতেই এবার সিঙ্গুর ইস্যুতে সরকারের উপর নতুন করে চাপ বাড়াতে পারে বিরোধীরা? সেই প্রশ্নই জোরালভাবে ঘুরতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলের আনাচে-কানাচে।
অনিচ্ছুক বা ইচ্ছুক কৃষকদের অনেকেই বলছেন, রাজ্য সরকার না মানলে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের জমির অধিকার ফেরাবেন। প্রয়োজনে আন্দোলন আরও বৃহত্তর পর্যায়ে যাবে। প্রসঙ্গত, আদালতের রায়ের পর আট বছর কেটে গেলেও জমি চাষ উপযোগী ও মালিকানা ফেরত না পাওয়ায় ক্ষোভের আগুন অনেকদিন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে সিঙ্গুরে। বিধানসভা ভোট হোক বা লোকসভা ভোট, বারবার ফিরে এসেছে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ। এবার সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢাললেন শুভেন্দু অধিকারী, মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের বড় অংশের।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার শোক মঞ্চ থেকেই লাগাতার রাজ্য সরকারের তুলোধনা করেন। আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে। সাফ বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে প্রয়োজনে টাটাদের হাতে-পায়ে ধরে তাঁদের সিঙ্গুরে ফেরাবেন। তবে অনিচ্ছুক কৃষকদের দাবির সঙ্গে শুভেন্দুর দাবির মিল খুঁজে পেতেই কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদল। মন্ত্রী তথা সিঙ্গুর বিধায়ক বেচারাম মান্না বলেন, “যারা টিভি মিডিয়ার সামনে জমি চাষ যোগ্য করা হয়নি বলে মুখ্যমন্ত্রীকে দোষারোপ করছেন তারাই এক সময় জমির দালালি করেছে। বেইমান বিশ্বাসঘাতকরা বিভ্রান্ত তৈরি করছে। শুভেন্দু অধিকারী সস্তার রাজনীতি করছে যার জবাব মানুষ বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে দিয়ে দিয়েছে।” কিন্তু, শুধু যে শুভেন্দু সুর চড়িয়েছেন তা তো নয়। সুর চড়িয়েছেন মহাদেব, দুধকুমারদের মতো একসময়ের জমি আন্দোলনের প্রথমসারির মুখেরা। যদিও তাঁরা বলছেন, শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁদের আন্দোলনের কোনও যোগ নেই।
২০০৬ সালের কৃষক আন্দোলনের সুফল যে তৃণমূল পেয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার কী সেই সিঙ্গুরকে হাতিয়ার করেই ছাব্বিশের লোকসভা ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে বিজেপি? দুধকুমার ধাড়া বা মহাদেব দাসদের দাবি, এর উত্তর দেবে ভবিষ্যত। তবে একইসঙ্গে তাঁদের আরও দাবি, অধিকার আদায়ে যে কোনও পথ অবলম্বন করতে রাজি সিঙ্গুরের বঞ্চিত কৃষকরা। তবে নতুন করে আন্দোলন কারও ফায়দা করে দেওয়ার জন্য নয়। আন্দোলনের গতি বুঝে পরিস্থিতি যেদিকে যাবে সেদিকেই যাবেন কৃষকরা। সবটাই হবে কৃষকদের স্বার্থে।