হুগলি: বউভাতের রাতে জীবনের বড় পদক্ষেপ নিলেন নব দম্পতি। অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন অন্ধ মানুষদের দৃষ্টি ফেরানোর। নবদম্পতি অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন মরণোত্তর চক্ষু দান করবেন তাঁরা। হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা সৌম্য চক্রবর্ত্তী ও গার্গী চক্রবর্ত্তী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন গত ২২শে জানুয়ারি। বুধবার ছিল তাঁদের বউভাত। সেই দিনই তাঁরা মরণোত্তর চক্ষু দানে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
সৌম্য ও গার্গী যোগাযোগ করেন চুঁচুড়া আলোয় ফেরা সংস্থার সঙ্গে। সেখানেই তাঁরা নতুন জীবনের শুরুর প্রথম দিনেই দু’জনে অঙ্গীকারবদ্ধ হন তাঁরা মরণোত্তর চক্ষুদান করবেন। একদিকে যখন রিসেপশনের লোকের কোলাহলের ভিড়, এরই মধ্যে আলোয় ফেরা সম্পাদকের সামনে দুই নব দম্পতি বসে ফর্ম ফিলাপ করলেন মরণোত্তর চক্ষু দানের।
এই বিষয়ে সৌম্য ও গার্গী দুজনেরই বক্তব্য, চোখের জন্য বহু মানুষ হাহাকার করেন। কারণ যাঁদের চোখের সমস্যা হয় বা চোখ প্রয়োজন হয়, তাঁরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসহায় বোধ করেন। সৌম্য ও গার্গী-দুজনেরই ইচ্ছা মৃত্যুর পর তাঁদেরই চোখ দিয়ে যেন রঙিন পৃথিবীতে দেখতে পান অন্য কেউ।
রিসেপশনে তখন আত্মীয়দের ভিড়। তখনও তাঁদের এক কোণে দুজনের হাতে হাত আর চোখে চোখ রাখতে দেখা গিয়েছে। হ্যাঁ, অবশ্যই সেই পলকে ছিল ভালবাসার সঙ্গে, সঙ্গে দৃঢ় প্রতিষ্ঠাও। গার্গী বললেন, “রাস্তায় অনেক সময়ে অল্প বয়সী মেয়ে-ছেলে, বাচ্চা দেখি, দেখতি পারছে না। ট্রেনে ভিক্ষা করে অনেকে। ভাল্ল লাগে না মনটা। একটাই তো জীবন। আমার জীবনের পরও যাতে আমার চোখ জীবন পায় ওদের মধ্যে দিয়ে, এর থেকে ভাল কী আর হতে পারে! ” সৌম্য বললেন, “আমার খুব ভাল লাগছে, যে আমার ভালবাসার মানুষটাও আমার মতো করে ভাবনাচিন্তা করে। ”
চুঁচুড়া ‘আলোয় ফেরা’র সংস্থার সম্পাদক উদয় কুমার পাল বলেন, নবদম্পতির সাহসী পদক্ষেপকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন তাঁরা। যেভাবে বিয়ের দিনে নতুন জীবন শুরু করার আগেই মরণোত্তর চক্ষুদানের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হন তাঁরা, তা প্রশংসনীয়।