হুগলি: উন্নয়নের নামে হরির লুঠ! প্রতিবাদ জানাতে গেলেই নেতাদের দাদাগিরি। এমন রাস্তা হল, যে আঙুল দিয়ে খোঁচাতেই রাস্তার পিচের চকলা উঠে আসছে হাতে। গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করেছিলেন। অভিযোগ প্রতিবাদ করতে গিয়েই তৃণমূল নেতার হুমকির পড়েন গ্রামবাসীরা। হুগলির গোঘাটের ত়ৃণমূল নেতা গৌতম পাত্রের দাদাগিরি ভাবুন! এক গ্রামবাসী নেতাকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, “কোদাল নিয়ে আসুন। কোদালও আনতে হবে না। রাস্তা খোঁচাতেই পিচ উঠে আসছে।” এই কথা বলা মাত্রই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন তৃণমূল নেতা গৌতম পাত্র। রীতিমতো ওই গ্রামবাসীর দিকে তেড়ে যান তিনি। চিৎকার করে বলেন, “হ্যাঠ… হ্যাঠ… চোখে ন্য়াবা হয়ে নাকি! দেখতে পাচ্ছো না রাস্তা”। গৌতমের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন আরেক নেতা। তিনি বলেন, “ওদের কোনও জ্ঞান আছে নাকি! জ্ঞান আছে? জানো একটা রাস্তা তৈরি করতে কত দিন সময় লাগে? ” চিৎকার চেঁচামেচি, গালিগালাজ করতে থাকেন তাঁরা। গোটা দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করছিলেন TV9 বাংলার প্রতিনিধি। তখন তাঁকেও গালিগালাজ করতে থাকেন অভিযুক্ত দুই তৃণমূল নেতা। বলতে থাকেন, “শুধু ক্যামেরায় ছবি তুইলেই হবে? জ্ঞান আছে তোমাদের? কোনও কথাবার্তা শোনার প্রয়োজন নাই। শুধু ছবি করে ছেড়ে দিচ্ছে!” বলেই গালি দিতে থাকেন তাঁরা।
গোঘাটের ভাদুড় ভিমতলা থেকে বালিকাকুণ্ডু পর্যন্ত ৪.২৬ কিলোমিটার রাস্তা। ওই রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। অনেক বলাকওয়ার পর সেই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হল। পিচ হচ্ছে। কিন্তু দিন তিনেক কাজ হতে না হতেই সেই পিচ রাস্তা থেকে উঠে যাচ্ছে। আঙুল দিয়ে একটু খোঁচাতেই রাস্তার পিচ উঠে যাচ্ছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে না। এক গ্রামবাসী বলেন, “পাথর মেশানো পিচ রাস্তা থেকে ঝুরঝুর করে পড়ে যাচ্ছে। আর সেই পিচ উঠলেই বেরিয়ে আসছে রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা।”
কিন্তু কেন এমনটা হবে? গ্রামবাসীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। TV9 বাংলায় সেই খবর সম্প্রচারিত হয়। আর তা দেখা মাত্রই রে রে করে তেড়ে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা গৌতম পাত্র। গ্রামবাসীদের দিতে থাকেন থ্রেট!
গ্রামের এক মহিলা বলছেন, “এখনই হাতে করে পিচ তোলা যাচ্ছে। দুদিন পর বাচ্চারা খেলবে। এরপর খুন্তি করেই পিচ তুলে নেবে ওরা।” পাড়ার এক ছেলে বললেন, “আমরা যখনই বলতে যাচ্ছি, তখন তৃণমূলের নেতারা বলছেন, আপনাদের থেকে আমাদের চিন্তা বেশি আছে। পাঁচ বছরের গ্যারান্টি আছে রাস্তার। ২ দিনেই যদি রাস্তার এই অবস্থা হয়, তাহলে পাঁচ বছর কী হবে?”
এই খবর তুলে ধরাতেই ক্ষেপে ওঠেন নেতা। যদিও সাংবাদিকদের হুমকি হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর মাথা ঠান্ডা হয় নেতাবাবুর। বলেন, “সাংবাদিকরা খবর করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এটাই ওঁদের কাজ। আমার সাংবাদিকদের ওপর কোনও রাগ নেই।” কিন্তু তা বলে গ্রামবাসীদের শাসাবেন? তখন তাঁর যুক্তি, “আসলে যেখানেই হঠকারিতা করা হয়েছে, সেখানেই সরকারের কাজ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। অভিজ্ঞতা বলছে। তাই গ্রামবাসীদের বলতে চাই, হঠকারিতা না করতে। সরকার যেখানে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে, সেখানেই কাজ বন্ধ করে চলে যাবে।” আর ঠিকাদার থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সবটাই এই খারাপ কাজের জন্য আবহাওয়াকেই দায়ী করছেন। গোঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিজন রায় বলেন, “বর্তমানে আবহাওয়ার জন্যই এই সমস্যা হয়েছে।ঠিকাদারও কাজ করছে। যাতে নতুন করে করা যায়, সেটার ব্যবস্থা করছি। পিচ জমতে সময় দিতে হবে।”