Durga Puja 2021: মা নিজেই চেয়েছিলেন চার হাত, বাঁকসার চৌধুরী বাড়িতে উমা চতুর্ভুজা
Hoogli: এক সময় এখানে সন্ধিপুজোর সময় কামানের তোপধ্বনি হতো। সেই ধ্বনি শুনে গ্রামবাসীরা এসে জড়ো হতেন। বুঝতেন পুজো শুরু হবে।
হুগলি: জনাইয়ের বাঁকসার চৌধুরী পরিবারের পুজো (Durga Puja)। শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো দালান মূলত এলাকার লোকজনের মিলনক্ষেত্র। পুজোর চারটে দিন এ বাড়িতেই হই হই করে কাটান তাঁরা। এ পরিবারের দুর্গা চতুর্ভুজা। চার হাত তাঁর। কথিত আছে, এ পরিবারের এক সদস্যকে মা স্বপ্নাদেশে জানিয়েছিলেন চার হাতের কথা। একই সঙ্গে মুখমণ্ডলে যেন অসুর বধের পর তৃপ্তির হাসি থাকে, তাও বলে দেন।
এ পরিবারের সদস্য সুশান্ত চৌধুরী জানান, স্বর্গীয় রাজারাম চৌধুরীর হাতে এ বাড়ির পুজোর প্রচলন হয়। সুশান্ত চৌধুরীর কথায়, “এই পুজোর সূচনা করেছিলেন স্বর্গীয় রাজারাম চৌধুরী। আমরা আগে হরিপালে থাকতাম। হরিপাল থেকে বাঁকসায় আসার পর উনি কাশী যাবেন বলে ঠিক করেন। এরই মধ্যে মা একদিন রাতে ওনাকে স্বপ্নাদেশ দেন। বলেন, ‘তোমাকে আর কাশী যেতে হবে না। তুমি বাঁকসায় ফিরে যাও’। মা নিজের রূপ বর্ণনা করে বলেন, ‘আমার চার হাত হবে। অসুর নিধনের পর যে মুখের আদল অর্থাৎ এক তৃপ্তির হাসি যেন মুখে থাকে’। প্রতিদিন হোম, যজ্ঞ চণ্ডীপাঠ তো আমাদের পুজোতে চলেই। একই সঙ্গে চাল, বস্ত্র বিতরণও করা হয়।”
এক সময় এই পুজোয় পশুবলি হতো। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে এক অবাক করা ঘটনা ঘটে সন্ধিপুজোর সময়। সুশান্ত চৌধুরী বলেন, “আমাদের পুজোর শুরু থেকেই বলি প্রথা ছিল। বছর পাঁচেক আগে সন্ধিপুজোর বলির সময় খাড়া আটকে যায়। আমরা ভাবলাম মা আর হয়তো সন্তানের রক্ত চাইছেন না। সেই থেকে পশুবলি বন্ধ। এখন ফল বলি হয়।”
এ পুজোর নিয়ম রীতি আর পাঁচটা পুজোর থেকে আলাদা। সুশান্তবাবু জানান, “আমাদের পুজোটা একটু আলাদা। আমাদের এখানে কোনও বোধন বসে না। বেলতলাতে ষষ্ঠাদিকল্প, দেবীর অধিবাস, আমন্ত্রণ হয়। ওই দিন থেকেই পুজো শুরু হয়। তার পর সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নানের পর এখানে আমাদেরই ন’টা পরিবার আছে, সেই ন’টা পরিবারের লক্ষ্মীকে এনে এখানে স্থাপন করা হয়। তারপর বাস্তু দেবদেবী, কালী, নারায়ণের পুজো করার পর মায়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়।”
এক সময় এখানে সন্ধিপুজোর সময় কামানের তোপধ্বনি হতো। সেই ধ্বনি শুনে গ্রামবাসীরা এসে জড়ো হতেন। বুঝতেন পুজো শুরু হবে। এখন আর সেই তোপধ্বনি হয় না, বদলে সাধারণ পটকা ফাটানো হয়। সেই আওয়াজ শুনে গ্রামবাসীরা আসেন। এ পুজোয় গ্রামবাসীদের অংশগ্রহণ দেখার মতো। তাঁদের কাঁধে চেপেই মা দশমীতে সরস্বতী নদীতে বিসর্জন যান।
স্থানীয়রা জানান, নতুন পোশাক, নাচগান, বাচ্চাদের খেলাধূলা—পুজোর চারটে দিন এভাবেই তাঁদের চৌধুরী বাড়ির পুজো দালানে কাটে। এ পুজো তাঁদের কাছে গর্বের।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: বাঁকসার মিত্র বাড়ির মন্দিরের আদলেই নাকি দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির গড়েন রাসমণি