কলকাতা: এক বাঙালি কন্যার অন্নপূর্ণা শৃঙ্গ জয়ের দুর্ধর্ষ অভিযান। একবার শৃঙ্গের খুব কাছ থেকে ফিরে আসা। তারপরে দিন জ্বর গায়ে সেই শৃঙ্গেই সাফল্য। গত সোমবার সকালে আট হাজারি শৃঙ্গ অন্নপূর্ণা জয় করেন বাংলার মেয়ে পিয়ালি বসাক (Piyali Basak)। একদিকে যেমন নেপালের এই শৃঙ্গ আরোহণে বাংলার জন্য জয় নিয়ে এসেছেন পিয়ালি। অন্যদিকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল ভারতের অন্য দুই পর্বতারোহীকে। তাঁরা যে শুধুমাত্র শৃঙ্গ জয়েই ব্যর্থ হয়েছেন তাই নয়। অল্পের জন্য প্রাণেও রক্ষা পেয়েছেন। একজন রাজস্থানের ৩৪ বছরের পর্বতারোহী অনুরাগ মালু। আরেক জন হিমাচল প্রদেশের ২৭ বছর বয়সী পর্বতারোহী বলজিৎ কউর।
অনুরাগ শৃঙ্গ অবধি পৌঁছতে পারেনি। তার আগেই ফিরতে হয়েছিল। শুধু ব্যর্থ হয়ে ফেরাই নয়। ক্যাম্প ৩ থেকে নিচে আসার সময় নিখোঁজ হন তিনি। শৃঙ্গ জয়ে বেরিয়ে ক্যাম্প ৪ থেকে উপরে প্রায় অবশ হয়ে আসে বলজিৎ। তাই তাঁকে দুই শেরপা সেখানেই রেখে আসেন। পরে তল্লাশি চালিয়ে বলজিৎকে উদ্ধার করা হয়। আর তিনদিন পর খোঁজ মেলে রাজস্থানের অনুরাগের। এদের মধ্যে বলজিৎ ছিল পিয়ালি বসাকের টিমেরই। আর শৃঙ্গ আরোহণের পথে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছিল অনুরাগ মালুর সঙ্গেও।
পিয়ালি বসাক জানাচ্ছেন, অনুরাগ মালু তখন ব্যর্থ হয়ে ফিরছেন। আর অন্নপূর্ণার চূড়ার দিকে অনেক স্বপ্ন চোখে নিয়ে যাচ্ছেন পিয়ালি। পথে ক্লান্ত অবস্থায় দেখেছেন অনুরাগকে। তবে অনুরাগকে ব্যর্থ হতে দেখে হতাশ হননি পিয়ালি। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন, অন্নপূর্ণা জয় করে তবেই ফিরবেন। তিনি বলেন, “যাওয়ার পথেই অনুরাগ মালুর সঙ্গে দেখা হয়। ও সামিট জয় না করেই ফিরছিল। আমি ওকে সাবধানে নামতে বলি। তারপর নিজের সামিটের উদ্দেশে এগিয়ে যাই। আমি কোনওভাবে ভেঙে পড়িনি। কারও অসফলতা আমাকে ছুঁতে পারেনি। কারণ এই ট্রেকিং অনেক দুর্গম ও কঠিন। নিজ নিজ দক্ষতার উপর এই সামিট জয় নির্ভর করে। আমি নিজের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এর আগেও আমি অনেক সামিট করেছি তো। অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাছাড়া বাকিরা একবার অন্ন্পূর্ণা জয় করেছে। আমি তো দু’বার । একবার খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছি। পরিকল্পনার অভাবেই প্রথমবার ফিরে আসতে হয়। অনেকটা দূর পৌঁছনোর পর দেখি দড়ি নেই আর।”
এদিকে ১৭ এপ্রিল শৃঙ্গ জয় করে ক্যাম্প ৪ এ ফিরে আসেন পিয়ালি। তখন অন্নপূর্ণার মতো শৃ্ঙ্গকে ছুঁয়ে দেখার আনন্দে বিহ্বল তিনি। এই সময় রাত ২ টোর সময় খবর পান নামতে পারেননি বলজিৎ কউর। ক্যাম্প ৪ এ বলজিতের সহকারী দুই শেরপা ফিরে আসেন। পিয়ালি বলেছেন, “দুই শেরপা এসে বলেন, বলজিৎকে আর নামিয়ে আনতে পারিনি। তারপরই বেস ক্যাম্পে খবর দেওয়া হয়। পরের দিন ভোরেই হেলিকপ্টার দিয়ে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান।” এইভাবেই নিজের যাত্রাপথে আরও দুই পর্বতারোহীর সঙ্গে দেখা হয় পিয়ালির। এইস সব অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়েই নিজের রাজ্যে ফিরে আসলেন পিয়ালি। এবার অন্য আরেক অভিযানের অপেক্ষায় বাংলার পাহাড় কন্যা।