হুগলি: টানা কয়েকমাস ধরে পর পর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে খেতের ফসল খেতেই পচে যাচ্ছে। মাথায় হাত কৃষকদের। দুর্মূল্য শস্য-সবজি। সর্বনাশা বৃষ্টি শুরু হয়েছে গত কয়েকদিন ধরে। কপালে হাত বাংলার কৃষকদের। গলায় হতাশার সুর। পাকা ধানে মই দিয়েছে খোদ প্রকৃতি। রাত পোহালেই কোজাগরি লক্ষ্মী পুজো। কিন্তু তার আগে কৃষকদের গলায় শুধুই হাহাকার। ধানের গোলা শূন্য, বৃষ্টির জলে ডুবে ধানের জমি। বন্যার কারণে অনেক জায়গায় আমন-আউশের চাষই করা যায়নি। নতুন করে ধানের ফলন না হওয়ায় আগামিদিনে কমবে চালের জোগান। এদিকে হু হু বাড়বে চালের দাম।
একাধিক কারণে সবজির দাম বাড়ার পাশাপাশি চালেরও দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। জুলাইয়ের শেষ এবং অগস্টের শুরুতে প্রবল বর্ষণ হয়েছে বাংলায়। এর জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন ও আউশ ধানের বীজে। লক্ষ লক্ষ বিঘা জমি এই বৃষ্টিতে জলের তলায় চলে যায়। বীজ রোপণ করা জমিতেও প্রবল ক্ষতি হয়। বীজ নষ্ট হওয়ায় দেরিতে শুরু হয় চাষ। আর দেরিতে চাষের কারণে ধানে পোকা ছেয়ে যায়। ফলে নতুন করে আবার বীজ রোপণ করতে হয় সেপ্টেম্বরের শেষে। কিন্তু সেপ্টেম্বরেও যে প্রবল বর্ষণ থেকে রক্ষা মেলেনি। ডিভিসির ছাড়া জলে প্রবল ক্ষতি হয়েছে ধানি জমির। ধানের শিসে জমাট বেঁধেছে বালি। আর সেই বালির কারণেই মার খেয়েছে ফলন।
চালের জোগানে টান কেন পড়বে?
লাগাতার বর্ষণ। কয়েক দিন ছেড়ে ছেড়েই টানা বৃষ্টিপাত। ফলে অগস্টের শেষে যে ধান রোপণ করা হয়েছিল অতিরিক্ত জলের ফলে তা একেবারে জলেই গিয়েছে। কৃষকরা বলছেন, এই নষ্ট জমিতে আর ধান হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। ধানের শিসে যে তরল থাকে তা একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফুলগুলিকে নষ্ট করে দিয়েছে। সঙ্গে পোকা লেগে গিয়েছে। হুগলির কৃষকরা বলছেন, ১ বিঘা জমিতে যেখানে ১২ থেকে ১৪ মন ধান হয়, সেখানে বড় জোর ৮ থেকে ১০ মন ধান হতে পারে এবার।
ধান গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে জল। এই জল ২-৩ দিন থাকা মানেই সর্বনাশ। অথচ যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে ২-৩ দিন তো কোনও ব্যাপারই না। অর্থাৎ আগামিদিনে চালের একটা সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলেই দাবি করছেন চাষিরা। পাশাপাশি যে ধান মজুত রয়েছে, কৃষকরা বলছেন, তার সবটাই ব্যবসায়ী-আড়তদার বা মিল মালিকের কাছে। ফলে ব্যাপক হারে কালোবাজারির আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।
আর কৃষকদের দুর্দশার তো অন্তই নেই! চাষ করেই মুখে অন্ন তোলেন তাঁরা। অথচ এই বৃষ্টিতে ঘরে বসে রয়েছেন। এই ধান থেকেই খই, মুড়কি তৈরি করে ধনদেবীর আরাধনা করেন তাঁরা। এবার বিধি বাম! হতাশায় ডুবছেন অন্নদাতারাও।