Primary Recruitment: মৃত্যুর পর প্রাইমারি শিক্ষকের চাকরির নিয়োগপত্র দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার!
Primary Teacher Recruitment: এই বয়সে নিয়োগপত্র কী জন্য হাতে এল, তাও স্পষ্ট নয় প্রবীণদের অনেকের কাছে। অবসরের বয়সই তো পেরিয়ে গিয়েছে, তাহলে চাকরি করবেন কীভাবে? সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। অনেকগুলি বিষয় নিয়েই ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে তাঁদের মনে। এদিকে নিয়োগপত্রে স্কুলের নাম উল্লেখ রয়েছে। তাই ধোঁয়াশা কাটাতে কেউ ছুটছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলে। আবার কেউ ছুটছেন সার্কেল অফিসে।
হুগলি: চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে করতে শেষে ইহলোকই ছেড়ে চলে গিয়েছেন। মৃত্যুর পর অবশেষে সেই ব্যক্তির নামে ইস্যু হল চাকরির নিয়োগপত্র। প্রাথমিকে চাকরির নিয়োগপত্র। একজন নয়, এমন চারজন রয়েছেন, যাঁদের মৃত্যু হয়েছে এবং এতদিন পর নিয়োগপত্র ইস্যু হয়েছে। এছাড়া বাকিদেরও অনেকের বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কারও বয়স চৌষট্টি, কারও একাত্তর। এই বয়সে তাঁদের হাতে এসেছে চাকরির নিয়োগপত্র। প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছেন তাঁরা। জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তরফে এমন প্রায় ৬৬ জনের নামে নিয়োগপত্র ইস্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চার জনের আবার মৃত্যুও হয়েছে। আর যাঁরা এ জীবনে নিয়োগপত্র হাতে পেলেন, তাঁদের অনেকেরই বয়স ষাট পেরিয়ে গিয়েছে। একদিকে যখন চাকরির দাবিতে রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এক ঝাঁক তরুণরা, তখন অবসরের বয়স পেরিয়ে যাওয়া প্রবীণ-বৃদ্ধদের হাতে এল চাকরির নিয়োগপত্র। আর এই নিয়েই হইচই হুগলির শিক্ষা মহলে।
এই বয়সে নিয়োগপত্র কী জন্য হাতে এল, তাও স্পষ্ট নয় প্রবীণদের অনেকের কাছে। অবসরের বয়সই তো পেরিয়ে গিয়েছে, তাহলে চাকরি করবেন কীভাবে? সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। অনেকগুলি বিষয় নিয়েই ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে তাঁদের মনে। এদিকে নিয়োগপত্রে স্কুলের নাম উল্লেখ রয়েছে। তাই ধোঁয়াশা কাটাতে কেউ ছুটছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলে। আবার কেউ ছুটছেন সার্কেল অফিসে।
যে ৬২ জন নিয়োগপত্র পেয়েছেন, সেই তালিকায় রয়েছেন ৬৪ বছরের দীনবন্ধু ভট্টাচার্যও। তিনিও ছুটে এসেছেন পান্ডুয়ার সার্কেল অফিসে। খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা গেল, তাঁদের এই ঝক্কি আজকের থেকে নয়। সেই বাম আমল থেকে। তাঁর দাবি, তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন, তবু চাকরি পাননি। পরে প্যানেল বাতিলও হয়ে গিয়েছিল। তারপর আদালতে মামলা-মোকদ্দমাও চলেছিল দীর্ঘদিন। তারপর এতগুলি বছর পেরিয়ে ষাট বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর শিক্ষা সংসদের থেকে তাঁর হাতে নিয়োগপত্র এসেছে। কী করে এল, তা জানেন না তিনিও।
নিয়োগপত্র এসেছে ৭১ বছরের বৃদ্ধ অচিন্ত্য আদকের হাতেও। তিনিও কার্যত হতবাক। বলছেন, “আমরা ১৯৮৩ সালে মামলা করেছিলাম। এখন চাকরি দিচ্ছে। কী করে দিল জানি না। ষাট বছরে তো অবসর হয়, আর এই বয়সে কী করে চাকরি করব।”
প্রবীণ ষাটোর্ধ্ব চাকরি-প্রাপকরা বলছেন, নিয়োগপত্রে সই রয়েছে হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন শিল্পা নন্দীর। বিষয়টি নিয়ে তাই যোগাযোগ করা হয়েছিল শিল্পা নন্দীর সঙ্গেও। কিন্তু তিনি কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধি তাঁকে ফোনে করলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল হুগলি জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। তাঁর বক্তব্য, “আদালত যে রায় দিয়েছে, সেটাই কার্যকর করা হয়েছে। আদালতের রায়কে কার্যকর করা আমাদের দায়িত্ব। দফতরের আধিকারিকরা সেই কাজটিই করেছেন।”
এদিকে জেলার শিক্ষা মহলেও এই নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। এবিপিটিএর কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহন পন্ডিত বলেন, এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। শোনা যাচ্ছে, ১৯৮৩ সালে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, কিন্তু চাকরি হয়নি, তাঁরা ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন মামলা করেছেন। তিন বার মামলা করে রায় পেয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে নাকি তাঁদের সুবিধা কার্যকর হবে। শুনছি, একদিন জয়েনিং করেই, তাঁদের অবসর হয়ে যাবে। পেনশনের সুবিধাও পাবেন শুনছি।”
কিন্তু এক্ষেত্রে এবিপিটিএর কেন্দ্রীয় সভাপতির যুক্তি, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ন্যূনতম ১০ বছর অবিচ্ছিন্ন চাকরি করতে হবে। তবেই তিনি পেনশন পাবেন। এক দিন কম হলেও তিনি পেনশন পাবেন না। গ্র্যাচুইটি পাবেন সেক্ষেত্রে।” বিষয়টি নিয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলেও জানাচ্ছেন তিনি। তাঁর দাবি, গোটা ঘটনাটি কী চলছে, সেটির সত্যতা যাতে উদ্ঘাটিত হয়।
এদিকে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন পাল আবার গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকেই বিঁধেছেন। তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা নিয়োগপত্র পাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছেন। বাকিদেরও অনেকের বয়স ৬৫-৭০ বছর হয়ে গিয়েছে। অকর্মণ্য সরকার চলছে রাজ্যে। তার জন্যই এই ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানা হচ্ছে। সরকারের কাছে আপডেট তথ্যই নেই, যে অনেকে মারা গিয়েছেন। আদালতে শিক্ষা সংসদের যে আইনজীবী ছিলেন, তাঁরা কি আপডেট খবর দিতে পারেননি?”
যদিও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা যাচ্ছে,২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার। সেই মত ৬৬ জনের নিয়োগ পত্র ছাড়া হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে। আদালতের নির্দেশ মতোই পদক্ষেপ হয়েছে বলে দাবি ওই সূত্রের।