খানাকুল : তিন বছর আগে ঘটা করে শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী অসীমা পাত্র। পানীয় জলের সমস্যা খুব শীঘ্রই মিটতে চলেছে বলে আশা করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু, হুগলির খানাকুলের ঘোষপুরের বাসিন্দাদের সেই আশা আজও পূরণ হয়নি। পানীয় জল আনতে যেতে হয় দূরের টিউবওয়েলে। রান্নার জন্য ব্যবহার করতে হয় পুকুরের জল। এই নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার শুধু শিলান্যাসই করে। কোনও প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয় না।
খানাকুলের ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর পাড়ায় প্রায় দুশো পরিবারের বাস। বেশির ভাগই চাষি। দিন মজুর করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা। এই নিয়ে গ্রামবাসীদের দাবি মেনে বছর তিনেক আগে পিএইচই দফতর থেকে জল প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি জল দেওয়ার ছাড়পত্র মিলে। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে এই পিএইচই-র জল প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন মন্ত্রী তথা ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র। জল প্রকল্পের জন্য গ্রামের মানুষও এগিয়ে এলেন যাবতীয় সহযোগিতা করার জন্য। জল প্রকল্পের জন্য লাগত উপযুক্ত জায়গা। স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার আলি মিদ্দে ১২ কাঠা জমি দান করলেন। জল প্রকল্পের জন্য রইল না আর কোনও সমস্যা। স্থানীয় মানুষ ভাবলেন, খুব শীঘ্রই গ্রামের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে পানীয় জল। প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। গভীর সাবমার্সিবলের জন্য পোঁতা হয় পাইপ। তারপর আচমকা সব থমকে গেল। অর্থের অনুমোদন মিলে গেলেও আজ পর্যন্ত কাজই হয়নি। তৈরি হয়নি জলের ট্যাঙ্ক। বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিতে পাইপলাইন পাতা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এখন বেশ খানিকটা দূর থেকে পানীয় জল আনতে হয়। রান্নার জন্য তাঁরা পুকুরের জল ব্যবহার করেন। তিন বছরেও কেন জল প্রকল্পের কাজ শেষ হল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
জল প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার জন্য পিএইচই-র কর্মকর্তাদের দুষলেন ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূল নেতা হায়দার আলি। তিনি বলেন, “গ্রামের মানুষ বারবার পঞ্চায়েতে দরবার করছেন পানীয় জলের জন্য। দূর থেকে পানীয় জল আনেন গ্রামের মানুষজন। আমরা বিভাগীয় মন্ত্রীর কাছে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছি। পঞ্চায়েতের তরফে পিএইচ দফতরে লিখিত জানিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
এই নিয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করলেন বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুশান্ত কুমার বেরা। তিনি বলেন, “বাংলাজুড়ে এমন অনেক প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। কিন্তু, তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রশাসন এটা নিয়ে ভাবছেও না। আগামিদিনে এদের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে বলে মনে হয় না।”
রাজনৈতিক এই তরজায় অবশ্য ঘোষপুরের বাসিন্দাদের কোনও আগ্রহ নেই। তাঁদের একটাই আর্জি, দ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হোক গ্রামে। বাড়ির ট্যাপ খুললেই যেন পাওয়া যায় পানীয় জল। এই আশাতেই রয়েছেন তাঁরা।