হুগলি: খামখেয়ালি আবহাওয়ার জেরে শীতের দুয়ারে কাঁটা পড়েছে। মরসুম এসে গেলেও আলুচাষে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। এরইমধ্যে ক্রমেই বাড়ছে সারের দাম। মরসুমি বাজারে সার নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ পেয়ে এ বার সরাসরি সারের দোকানগুলিতে অভিযান চালাল হুগলি জেলা প্রশাসন। তিন ব্যবসায়ীকে শোকজও করে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সারের কালোবাজারির খবর পেয়ে দোকানগুলিতে সরাসরি অভিযান চালান কৃষি দফতরের আধিকারিকরা। সার বিক্রির হিসেব না দিতে পারায় তিনজন ব্যবসায়ীকে শোকজ করা হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে শোকজের জবাব না দিতে পারলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
নভেম্বরের শেষ। এ বার আলু বীজ মাটিতে বসিয়ে ফলাতে গেলে সময় বেশি লাগবে। তাতে ফলন মার খাবে। তাই চাষিরা সরাসরি আলু বসানোর কাজ শুরু করেছেন। আলুর ফলন বৃদ্ধি করতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। কৃষকদের অভিযোগ, তাঁদের চাহিদার সুযোগ নিয়ে সারের দাম হঠাত্ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বস্তা সারের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
পরিস্থিতি যেদিকে তাতে আলু চাষ থেকে সরে যাওয়ার আশঙ্কা অর্ধেক চাষির। রাসায়নিক সারের দাম বস্তা পিছু প্রায় ৪০০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির প্রিন্ট রয়েছে বস্তার গায়ে। সেই মূল্য দিয়েও সুরাহা হচ্ছে না। আরও বেশি দাম দিয়ে ব্ল্যাকে ৩০০-৪০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে রাসায়নিক সার। নাজেহাল চাষিরা তাই সরে যেতে চাইছেন আলু চাষ থেকে। এদিকে কালোবাজারির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষও। তাহলে ভবিষ্যতে আলুর দাম কোথায় গিয়ে থামতে পারে? প্রশ্ন উঠছে।
বলা যায়, কৃষকদের মাথায় কালো মেঘ। তাঁরা জানাচ্ছেন, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রাসায়নিক সারের দাম। প্রিন্ট প্রাইসে রাসায়নিক সার পাওয়া যাচ্ছে না। দাম যা লেখা থাকে তা থেকে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা বেশি মূল্যে রাসায়নিক সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। যার ফলে চাষিরা আলু চাষ কমিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এখনও মাঠ থেকে কাটা ধান বাড়িতে ওঠেনি। ধান বাড়িতে তুলে আলু বসানোর তোড়জোড় শুরু করেন কৃষকরা। কিন্তু তার মধ্যেই ধাক্কা। কোনও চাষির নিজের জমি রয়েছে, তো কেউ ভাগচাষি। আর এমতাবস্থায় যদি রাসায়নিক সারের দাম বেশি হয় তাহলে তাঁরা আর চাষ করতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন। যার ফলে উৎপাদিত আলুর দাম আরও বাড়তে পারে।
তবে কেন রাসায়নিক স্যারের দামে কালোবাজারি হচ্ছে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি গোঘাট ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ। তিনি জানিয়েছেন কেন্দ্র সরকারের ভুল নীতির জন্যই এইসব হচ্ছে। তিনি এও বলছেন, রাসায়নিক সারের যে কোম্পানিগুলি আছে তারাই এই সমস্যার জন্য দায়ী। গোঘাটের একটি কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সদস্য স্বীকার করেছেন সমবায় সমিতিতে খোলাবাজারে তিন চারশো টাকা বেশি দিয়ে রাসায়নিক সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা।
যদিও প্রশ্ন উঠেছে প্রিন্ট প্রাইস এর ওপর কি দাম নেওয়া যায় ? কেন চাষিদের রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার রসিদ দেওয়া হচ্ছে না? কেন চাষিদের চড়া দামে রাসায়নিক সার কিনতে হবে ? কেন ব্যবসায়ীরা এই বিষয়ে মুখ খুলছেন না? চাষিদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন বিভিন্ন সরকার। কিন্তু রাসায়নিক সারের কালোবাজারি নিয়ে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? আলুর কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি হলে দায় কার? চাষিদের এই সমস্যার প্রেক্ষিতে এতগুলো প্রশ্ন উঠে আসে।
এরপরেই কালোবাজারি রুখতে কোমর বেঁধে মাঠে নামে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা শাসক(জেলা পরিষদ) শান্তনু বালা,কৃষি উপ অধিকর্তা জয়ন্ত পাড়ুই,কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী-সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা বিভিন্ন সারের দোকানে ঘুরে স্টক মেলান, কত দামে বিক্রি হচ্ছে তা দেখেন।
এদিন, পোলবা দাদপুর ব্লকের বেশ কয়েকটি সারে দোকানে অভিযান চালানো হয়। হারিটের তিনটি সারের দোকানে সারের মজুত আর বিক্রির হিসাব ঠিকমত দিতে না পারায় শোকজ করা হয় বলে জানিয়েছেন মনোজ চক্রবর্তী। সারের কালোবাজারি রুখতে এই ধরনের অভিযান চলবে বলেও জানান কৃষি কর্মাধ্যক্ষ। পাশাপাশি, এদিন সারের সমবন্টনের জন্য ব্লক ডিলারদের ডেকে বৈঠক করা হয়।
আরও পড়ুন: Tathagata Roy: বিজেপিতে রয়েছে পিকের মাইনে দেওয়া কর্মী! তাই…, ফের তথাগতর বোমা