চুঁচুড়া: তৃণমূলের প্রাক্তন উপ প্রধান খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হল দলেরই নেতাকে। হুগলির চুঁচুড়া আদালতে শুক্রবার ছিল সেই মামলা। আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক কাজি আবুল হাসেম ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে এই সাজা ঘোষণা করেছেন। তৃণমূলেরই প্রাক্তন প্রধান চিত্তরঞ্জন সাঁতরা-সহ মোট ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিন আদালতের সামনে ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান মৃত তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় বেরার অনুগামীরা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুঞ্জয় বেরা নামে ওই তৃণমূল নেতাকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল দলেরই নেতাদের বিরুদ্ধে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৎকালীন প্রধান চিত্তরঞ্জন সাঁতরা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজন মিলে মৃত্যুঞ্জয়কে পিটিয়ে মেরেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধনেখালির গোপীনাথপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ছিলেন ওই মৃত্যুঞ্জয় বেরা। এ দিন আদালতের সামনে চিত্তরঞ্জন সাঁতরার পরিবার দাবি করে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে চিত্তরঞ্জনকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গোপীনাথপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বেরা। আর তার আগে অর্থাৎ ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রধান ছিলেন চিত্তরঞ্জন। ২০১৮ সালের মে মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়। বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে না পারায় জয়ী হয় তৃণমূল। এরপরই চিত্তরঞ্জন সাঁতরা ও মৃত্যুঞ্জয় বেরার মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। পঞ্চায়েত কার দখলে থাকবে তা নিয়েই শুরু হয়েছিল দ্বন্দ্ব।
এরপর ওই বছরের ২৩ মে ধনেয়াখালির বিডিও পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের জন্য একটি সভা ডাকেন। আর সেই সভা থেকে ফেরার পথেই আক্রান্ত হন মৃত্যুঞ্জয় বেরা। কুমরুল আলুপট্টি এলাকায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাঁকে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ। রড, শাবল ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত অবস্থায় গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে তারকেশ্বর গ্রামীন হাসপাতাল সেখান থেকে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। ২৫ মে হাসপাতালেই মৃত্যুঞ্জয় বেরার মৃত্যু হয়। এরপর এলাকায় কার্যত আগুন জ্বলতে থাকে। ব্যাপক বিক্ষোভও হয়েছিল। সেই ঘটনায় এবার সাজা ঘোষণা হল।
চিত্তরঞ্জন সাঁতরা ছাড়াও এই ঘটনায় অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে সুরজিৎ সাঁতরা, বিশ্বজিৎ সাঁতরা ও বিশ্বজিৎ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। উলুবেড়িয়া থেকে গ্রেফতার হয়েছিল অরূপ সিং-কে। বিদ্যুৎ রায়, দীপু বাউড়ি, কাজি মহম্মদ বাদশাকেও গ্রেফতার করা হয়।
এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ের মা এবং মেয়ে। তাঁরা দাবি করেছেন, যাবজ্জীবন নয় ফাঁসির সাজা শোনানো হলে তাঁরা বেশি খুশি হতেন।