উত্তরপাড়া: টেলি দুনিয়ায় বহুদিনের পরিচিত মুখ কাঞ্চন মল্লিক। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা, প্রশংসিত হয়েছে কাঞ্চনের অভিনয়। কমিক ক্যারেকটারে যাঁকে দেখে বাহবা দিয়েছে বাঙালি, সেই অভিনেতাই হয়ে গেলেন বিধায়ক। তারকা বিধায়ক। একুশের নির্বাচনে উত্তরপাড়া থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন। সেই বিধায়ক এবার শিরোনামে। না, অভিনয়ের উৎকর্ষতার জন্য নয়, এলাকার উন্নয়নের জন্যও নয়। তিন নম্বর বিয়ে করেছেন বিধায়ক। লাল শেরোয়ানি পরে স্ত্রী তথা অভিনেত্রী শ্রীময়ীকে বুকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছেন ৫৩ বছরের কাঞ্চন মল্লিক। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ভাইরাল কাঞ্চন-শ্রীময়ী। সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে কাঞ্চন-শ্রীময়ী। কিন্তু উত্তরপাড়ায়? এলাকা জুড়ে একটাই প্রশ্ন, ‘কাঞ্চন কই?’
এলাকার বিধায়কের তৃতীয় বিয়ে নিয়ে কী বলছে উত্তরপাড়ার মানুষ? কী বলছে বিরোধী দলগুলি? প্রায় ৩ বছর হতে চলল বিধায়ক হয়েছেন কাঞ্চন। তৃতীয় বিয়ের চেয়েও এলাকায় তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে উঠল প্রশ্ন।
এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, কাঞ্চন মল্লিক ভাল অভিনেতা, ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে আমরা কোনওদিন এখানে দেখি না। বিধায়ক বলে এখানে কেউ নেই। পুরসভার মাধ্যমে যেটুকু কাজ হয় ওইটুকুই। বিধায়কের তৃতীয় বিয়ে নিয়ে কী বলছেন? ‘বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন অসুবিধা নেই। বিয়ে করতেই পারেন। ভাল অভিনেতা, মহিলারা নিশ্চয় আকৃষ্ট হন। তিনটে কেন, চারটে বিয়ে করুন, কিন্তু আমাদের কোনও লাভ নেই। আমরা জানতে চাই, বিধায়ক কোথায়?’
আর এক বাসিন্দারও সাফ জবাব, ৫ টা বা ১০ টা বিয়ে করলে কী যায় আসে! কিন্তু দলীয় অনুষ্ঠান ছাড়া কোথাও কাঞ্চন মল্লিককে দেখতে পাওয়া যায় না। অভিযোগ, ভোটে জেতার পর থেকে কাজ তো দূরের কথা, এলাকাতেই দেখা যায়নি কাঞ্চনকে। আগের বিধায়কেরা কিন্তু এমনটা ছিলেন না, একথাই বলছেন এলাকার বাসিন্দারা।
মুখ খুলছেন এলাকার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও। তৃণমূলের সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রণয় রায় বলেন, বিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা জন্ম জন্মান্তরের বন্ধন। আর এখানে বিধায়ক একজন সঙ্গীকে বেছে নিয়েছেন, ৫ বছর পর হয়ত আরও এক সঙ্গীকে বেছে নেবেন। এই দলের সংস্কৃতিই হয়ত এটা। কাঞ্চনের প্রসঙ্গে, ‘রাত ১২ টায় পার্টি অফিসে ডাকার’ অভিযোগের কথাও উল্লেখ করেছেন বিজেপি নেতা।
আর তৃণমূল? তারা তো লক্ষ্মণ শেঠের উদাহরণ টেনে আনছেন। তৃণমূল নেতা আচ্ছেলাল যাদব বলছেন, ‘লক্ষ্মণ শেঠ ২-৩ টে বিয়ে করতে পারেন, আর আমাদের বিধায়ক করলে কী অপরাধ! কষ্টের সময় যে সঙ্গে থাকে, তার সঙ্গে সারাজীবন থাকতে হয়। এতে কোনও অসুবিধা নয়।’
ব্য়ক্তিগত বিষয় নিয়ে আক্রমণের পথে হাঁটতে রাজি নয় সিপিএম। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য রজত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ওঁর কোনও অবদান নেই। মানুষ যখনই বিপদে পড়েছেন, বিধায়ককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু বলার নেই।’