‘মমতা ডাকলেও প্রচারে যাব না’, অভিমানী সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই
"যারা তোলাবাজি করে, কাটমানি খায়, যারা বিভিন্নভাবে দলকে টাকা-পয়সা দেয় তারাই শক্তিশালী করবে তৃণমূলকে'' টিকিট না পেয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের
হুগলি: তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় জায়গা না পেয়ে ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের সংখ্যাবৃদ্ধি অব্যাহত। এবার পরোক্ষে তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-এর দিকে আঙুল তুলে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (Rabindranath Bhattacharjee)। বললেন, মমতা প্রচারে ডাকলেও যাব না। কারণ, তাঁর সঙ্গে আমার মেলে না। রবীন্দ্রনাথের আরও অভিযোগ, বয়সজনিত কারণ দেখিয়ে জোর করে বসিয়ে দেওয়া হল তাঁকে।
শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নবীনদের আধিক্য দেখা গিয়েছে। মমতার কথায়, প্রবীণ ও নবীনদের সংযোজনে তৈরি হয়েছে প্রার্থী তালিকা। তবে এবার বাদ গিয়েছেন বহু বয়স্ক বিদায়ী বিধায়ক। তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন হাওড়া শিবপুরের বিদায়ী বিধায়ক জটু লাহিড়ি তেমনি রয়েছেন সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও। এদিন মমতা জানিয়েছেন কোভিডের কারণে বয়স্কদের প্রার্থী করা হচ্ছে না। দলে তাঁরা যে ‘সার্ভিস’ দিয়েছেন তার জন্য় তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে দল। যদিও দলদেত্রীর এই তত্ত্ব মানতে নারাজ রবীন্দ্রনাথ। তাঁর তোপ, “বয়সজনীত কারণ দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে আমাকে। আমি নাকি অক্ষম। ঠিকভাবে কাজ করতে পারব না, দলকে শক্তিশালী করতে পারব না!
তাহলে কারা শক্তিশালী করবে দলকে? এই প্রশ্নের উত্তরে সিঙ্গুরের মাস্টারমশাইয়ের কটাক্ষ, “যারা তোলাবাজি করে, কাটমানি খায়, যারা বিভিন্নভাবে দলকে টাকা-পয়সা দেয় তারাই শক্তিশালী করবে।” এরপরে সিঙ্গুরের বর্ষীয়ান বিধায়ক নিজেই জানান, মমতা ডাকলেও আর প্রচারে যাবেন না তিনি। বলেন, “তাঁর সঙ্গে আমার মেলে না।”
প্রসঙ্গত, ২০০১ সাল থেকে সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তিনি মন্ত্রীও হন। তবে পরে দলের সঙ্গে ব্যবধান তৈরি হয়। মন্ত্রিত্বও দেওয়া হয়নি তাঁকে। পাশাপাশি যে বেচারাম মান্নার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মতবিরোধ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে তিনিই এবার সিঙ্গুরের প্রার্থী।
আরও পড়ুন: তৃণমূলে আমার প্রয়োজন ফুরোল, টিকিট না পেয়ে অশ্রুসজল আরাবুল
সাম্প্রতীক অতীতে রবীন্দ্রনাথের পুত্র বিজেপি-মুখী হয়েছেন। একসময় রবীন্দ্রনাথ নিজেও দল ছাড়ার ইঙ্গিত দেন। কখনও তিনি অভিযোগ করেছেন, যেমন খুশি কমিটি বদল করে কাজের নেতাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। কখনও বলেছেন, তিনি ‘সম্মান’ পাচ্ছেন না। দলের কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের নেতা বেচারাম মান্নার নাম করেই তাঁকে বলতে শোনা যায়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভায় বলেছেন, “বেচারাম, মাস্টারমশাইকে সম্মান দিয়ে কাজ করো।” কিন্তু এবার সেই বেচারাম মান্নাকেই সিঙ্গুরের প্রার্থী করেছেন মমতা। যার প্রেক্ষিতে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। রাজনৈতিক মহল বলছে, এবার মাস্টারমশাইয়ের দলত্যাগ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।