Ayan Shil: ‘২ কোটি টাকা ফেরত চাইতেই পোষা কুকুর ছেড়ে দিয়েছিল অয়ন, আত্মহত্যা করে বাপ-ছেলে’

Ashique Insan | Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Mar 20, 2023 | 5:20 PM

Hooghly: দেবানন্দপুরের শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় এলাকার লোকজনের কাছে ছিলেন গুরুদা। এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এই গুরুদাকে অনেকেই চাকরির জন্য টাকা দিয়েছিলেন।

Ayan Shil: ‘২ কোটি টাকা ফেরত চাইতেই পোষা কুকুর ছেড়ে দিয়েছিল অয়ন, আত্মহত্যা করে বাপ-ছেলে’
দেবানন্দপুরের স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায়। ডানদিকে অয়ন শীল।

Follow Us

হুগলি: প্রায় ৩৮ ঘণ্টার ইডির (ED) তল্লাশি শেষে গ্রেফতার করা হয় অয়ন শীলকে। সোমবারই তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অয়ন গ্রেফতার হতেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ার এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ইডি সূত্রে খবর, অয়নের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৫ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি একাধিক দফতরে দুর্নীতির তথ্যসূত্র পেয়েছে ইডি। তদন্তে যে আরও নতুন নতুন মোড় বেরিয়ে আসবে তা বলাই বাহুল্য। তবে এরইমধ্যে অয়ন সম্পর্কে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন হুগলির দেবানন্দপুরের বাসিন্দারা। এই অয়নের ফাঁদে পড়ে এলাকার এক বাবা-ছেলেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে হয় বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি ডিএম অফিসে চাকরি করতেন। তাঁর স্ত্রী পূরবীও সরকারি চাকরি করতেন। ছেলে রূপকুমার একদম সাদাসিধা বলে জানান এলাকার লোকজন। কোনও কিছুর মধ্যেই থাকতেন না তিনি। এলাকার লোকজনের দাবি, ওই অয়নের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে এমন জালে জড়িয়ে যান, ছেলেকে মেরে নিজে আত্মঘাতী হয়েছিলেন।

দেবানন্দপুরের শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় এলাকার লোকজনের কাছে ছিলেন গুরুদা। এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এই গুরুদাকে অনেকেই চাকরির জন্য টাকা দিয়েছিলেন। আর সেই টাকা অয়ন শীলকে দিয়েছিলেন তিনি। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। যদিও চাকরি পাননি কেউই। এমনকী শ্রীকুমারবাবুর ভাগ্নেও চাকরি পাবেন বলে মামাকে টাকা দেন। তাঁরও চাকরি জোটেনি।

দেবানন্দপুরের দুলাল দাসের স্ত্রী গীতিকা দাস বিছানায় শয্যাশায়ী। গত নভেম্বর মাসে সেরিব্রাল অ্যাটাক হওয়ার পর থেকে চলার শক্তি নেই তাঁর। মাসে ৫ হাজার টাকার ওষুধ লাগে তাঁর। সেই ওষুধ কিনতে হিমশিম খেতে হয় দুলালবাবুকে। দুলাল দাসের অভিযোগ, তাঁর ছেলে ও মেয়ের প্রাথমিক স্কুলে চাকরির জন্য ৯ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন শ্রীকুমারবাবুকে। কিন্তু ছেলে, মেয়ের চাকরি হয়নি। উল্টে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে জমানো টাকা, জীবনবিমার সর্বস্ব খুইয়েছেন। দুলাল দাস বলেন, “গুরুকে টাকা দিই। বলেছিল টাকা দিলে চাকরি করে দেবে। বহু কষ্ট করে জমানো সব টাকা দিয়ে দিই। এরপর শুরু হল দুর্ভোগ।”

শ্রীকুমারের নিজের ভাগ্নে সুরজিৎ চক্রবর্তী। তিনি জানান, মামাকে ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন চাকরির জন্য। সঙ্গে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড থেকে শুরু করে কলেজ পাশের মার্কশিটের অরিজিনালও দেন তিনি। সেই নথি আর হাতেই পাননি তিনি। পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ডুপ্লিকেট কপি বের করেন। এলাকার লোকজনের কথায়, দেবানন্দপুর ব্যান্ডেল এলাকার বাসিন্দা ‘গুরুদা’ ভাল মানুষই ছিলেন। অয়ন শীলের পাল্লায় পড়ে এই জালে জড়িয়ে যান। বহু মানুষের সর্বশান্ত হওয়ার জন্য নিজেকে দায়ী মনে করতেন। সকলে এসে ওনার কাছে টাকা চাইতেন, বাড়িতে ভিড় হয়ে যেত লোকজনের। দেবানন্দপুরে বাসিন্দা স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায় শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিবেশি।

স্নেহাশিসবাবুর কথায়, “পুলিশ সেই সময় সুইসাইড নোট, বাপ-ব্যাটার দেহ সবই নিয়ে গিয়েছিল। আমি সেই নোট দেখেছিলাম। সেখানে গুরুদা পরিষ্কার বলে গিয়েছিলেন ২ কোটি টাকা অয়ন শীল নিয়েছে। যখন গুরুদা দেখেছিলেন অয়ন প্রতারণা করেছে, একাধিকবার উনি বলেছিলেন অয়নকে টাকাটা ফিরিয়ে দিক। চাকরি দিতে হবে না। একবার গুরুদা ওর বাড়িতে গিয়েছিল। সে সময় বাড়িতে পোষা কুকুর ছেড়ে দিয়েছিল গায়ের উপর। তখন গুরুদা নিজেকে আর সামলাতে পারেননি। ছেলেকে মেরে নিজেও আত্মহত্যা করেন। প্রতারণার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেননি। সুইসাইড নোটে পরিষ্কার ২ কোটি টাকা লেখা আছে। লোকে বলছে অয়ন শীল প্রোমোটার। একেবারে ভুল। ও হচ্ছে এজেন্ট।”

Next Article