হাওড়া: বাড়ির চারদিকে শুধু জল আর জল। সেই জলে আটকে থাকা বাড়ির উঠোনে বসে ভাত খাচ্ছিলেন বাবা-মা। একরত্তি শিশু সবে হাঁটতে শিখেছে একটু একটু। মা যখন ভাত খাচ্ছেন তাঁর চোখের আড়ালেই বাচ্চাটি নেমে যায় বাড়ি থেকে রাস্তা। কিন্তু রাস্তা মানেই তো এখন জলপথ। সেই জলে পড়ে গিয়ে মৃত্য়ু হল আড়াই বছরের ওই শিশুর! মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের শিবপুর এলাকায়। ঘটনায় শোকস্তব্ধ এলাকাবাসী।
জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরে বন্যার জলে পড়ে মৃত্যু হয় এক আড়াই বছরের শিশুর। মৃত শিশুর নাম রিদ্ধি ধাড়া। উদয়নারায়পুরে বন্যার জলে মৃত্যু হয় তার। বাবা মায়ের সঙ্গে বারান্দায় বসে খাওয়ার সময়ে মায়ের হাত থেকে ছেড়ে যাওয়ায় বাড়ির পাশের একটি জলায় পড়ে যায় শিশুটি। হঠাৎ ছেলেকে দেখতে না পেয়ে ভাত থালা ফেলে উঠে পড়েন বাবা-মা। শুরু করেন খোঁজ। তন্নতন্ন করে বাড়িতে খুঁজেও ছেলেকে পাননি তাঁরা। কয়েক মিনিট পর একটা পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে বাবা-মা ছো়টেন উদয়নারায়নপুর স্টেট জেলারেল হাসপাতালে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে এলাকায়। উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন। কিছুদিন আগেই একটি শিশুর এভাবে বন্যার জলে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বেসামাল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর। ফের জলবন্দি হয়েছে একাধিক এলাকা। হাওড়া জেলার গ্রামীণ এলাকায় মরসুমের দ্বিতীয় দফার বন্যায় কার্যত নাকাল মানুষ। প্রথম দফার মতোই এবারের প্লাবনেও হাওড়া জেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে উদয়নারায়নপুর। উদয়নারায়ণপুরের কুলটিকারি সেওড়াবেড়িয়া গ্রাম থেকে উদয়নারায়নপুর শহরে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি কুলটিকারি গ্রামে এক কোমর জল দাঁড়িয়ে এখন। স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত কোনও ত্রাণ পাননি তাঁরা। খাবার জলের অভাব দেখা দিয়েছে সাওড়াবেরিয়া গ্রামে। এই গ্রামগুলিতে জল ঢুকছে হু-হু করে। জল ডুবেছে আমতাও। আমতার দু’নম্বর ব্লক কার্যত জলবন্দি। আশঙ্কা, পুরো দু’নম্বর ব্লকই জলপ্লাবিত হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: Ghatal Flood Situation: মা-বাবা তখনও ঘুমোচ্ছিলেন! ঘরের হাঁটু সমান জলে ভাসছে চার বছরের ছেলের শরীরটা
সারা দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ আরও খারাপ হচ্ছে। ডিভিসির (DVC) ছাড়া জলে প্লাবিত আটটি জেলা। সবমিলিয়ে প্রায় ৪ লাখ মানুষকে বন্যা কবলিত এলাকা থেকে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরগুলিতে এবং অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১ লাখ বাড়ি।এদিন বন্যা দুর্গত এলাকাগুলি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তার পর নবান্ন (Nabanna) ফিরে জরুরিকালীন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের শীর্ষ আমলারা।
আরও পড়ুন: Mystry Death: দরজা খুলতেই হতবাক পুলিশ! ঘরে মধ্যে পড়ে রয়েছে বাবা,মা ও মেয়ের দেহ